অর্ঘ্য বিশ্বাস, ময়নাগুড়ি
পাক্কা দুটো দিন সাপের সঙ্গে বাস। সে জন্য টেনশনে দিন কাটল এক পরিবারের। লুকোচুরি চলার পরে পরিবেশপ্রেমীরা এসে উদ্ধার করেন অতিকায় অজগরকে। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের আনন্দনগর এলাকার বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী শঙ্কর রায়।
মঙ্গলবার রাতে আর পাঁচটা দিনের মতো রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমোতে গিয়েছিলেন শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘরের বেড়ার উপরে কোনও একটা শব্দ কানে আসে শঙ্করের। মোবাইলের আবছা আলোয় হলদে–কালো রঙের কিছু একটা দেখতে পান তিনি।
তাঁর ডাকে বাড়ির অন্যান্যরা ছুটে আসেন। কারও বুঝতে দেরি হয়নি, হলদে-কালো রংয়ের দীর্ঘ প্রাণী আসলে একটি অজগর সাপ। ততক্ষণে জানলা দিয়ে সিলিংয়ে উঠেছে বিশালাকার অজগরটি, চোখের নিমেষে ঘরের সিলিংয়ের গা ঢাকা দেয়। এর পরে আর ঘরে ঘুমোনোর সাহস পায়নি রায় পরিবার। বারান্দাতে জেগেই গোটা রাত কাটায় তারা।
বুধবার সকালে শঙ্করের মেয়ে পূজা অজগরটিকে বাড়ির বাইরের টিনের চালের নীচে নেমে আসতে দেখলে খবর দেওয়া হয় স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংস্থাকে। সর্প বিশারদ নন্দু রায়-সহ ময়নাগুড়ির পরিবেশপ্রেমী সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।
অজগরের খোঁজে চলে তল্লাশি। তবে দীর্ঘ সময়ে অনেক খোঁজাখুজির পরেও বুধবার দিনভর সেটির হদিস মেলেনি। সাপের ভয়ে থমকে যায় রায় পরিবারের জীবনযাত্রা। শঙ্করের ছেলে বাবাই বলেন, ‘ঘুম তো দূরের কথা, এক কথায় বাড়িতে উনুন জ্বালানো বন্ধ হয়ে যায়। সব সময়ে টেনশন।’ শঙ্করের স্ত্রী মিনতি বলেন, ‘বাধ্য হয়ে দুটো বেলা কেটে যাওয়ার পরে বারান্দায় রান্না–খাওয়া সারতে বাধ্য হই। সন্ধে নামতে আতঙ্ক নিয়েই ঘরে ঢুকি।’
বুধবার রাত গড়াতে ফের বিপত্তি। বাবাই ফের অজগরের দর্শন পান সিলিংয়ের মধ্যে। আবার খবর পেয়ে আসে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা। আবার চলতে থাকে লুকোচুরি। শেষে গভীর রাতে অজগরটিকে কাবু করতে সফল হন পরিবেশপ্রেমীরা।
নন্দু রায় জানিয়েছেন, সাত ফুট লম্বা এই অজগর বার্মিজ় পাইথন প্রজাতির। তিনি বলেন, ‘অজগর মূলত বিষহীন সাপ। তবুও সচেতন থাকা ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।’ বৃ্হস্পতিবার গোরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় অজগরটিকে। বন দপ্তর সূত্রে খবর, রায়দের বাড়ির কাছে নদী থাকার জন্য সাপটি এখানে চলে এসেছিল। ঘুরতে–ঘুরতে ঢুকে পড়ে বাড়িতে।