দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
নামেই বন দপ্তরের অফিস। কিন্তু সেখানে কোনও অফিসার নেই। নেই স্থায়ী কর্মীও। নেই দপ্তরের নিজস্ব গাড়ি। বন্যপ্রাণী ধরার উপযুক্ত সরঞ্জামও নেই। প্রায় এক ডজন ‘নেই’ নিয়ে কার্যত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বন দপ্তরের পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিস।
বুধবার জখম হনুমান উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটির মৃত্যুর ঘটনায় পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিসের হতশ্রী অবস্থাটা আরও একবার সামনে এল। যা দেখে স্থানীয়দের প্রশ্ন, বন দপ্তর কি নিধিরাম?
পাঁশকুড়া, কোলাঘাট এবং ময়না— এই তিন ব্লক এলাকার বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালিত হয় পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিস থেকে। ১৯৮২ সাল থেকে পাঁশকুড়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে চলছে এই অফিস। উন্নত পরিকাঠামো, সরঞ্জাম এবং পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে ধুঁকছে অফিসটি।
ফলে এলাকায় কোনও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে এখানকার বনকর্মীদের। এই মুহূর্তে বন দপ্তরের পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিসে নেই কোনও স্থায়ী রেঞ্জার। এগরার রেঞ্জারকে এই অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত স্থায়ী বনকর্মীও নেই। বন্যপ্রাণী ধরার মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর সঙ্কট রয়েছে এখানে।
কয়েকটি খাঁচা এবং সাপ ও হনুমান ধরার সরঞ্জাম ছাড়া আর কিছুই নেই পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিসে। এখানে বনদপ্তরের নিজস্ব কোনও গাড়ি নেই। বাঘরোলের মতো বড় কোনও প্রাণী ধরতে দরকার বড় মাপের জালও নেই বলে অভিযোগ। বন্যপ্রাণী ধরতে বন দপ্তরের হলদিয়া অফিস থেকে গাড়ি আনতে হয়। কখনও কখনও তাও মেলে না। তখন গাড়ি আনা হয় কলকাতা থেকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে গাড়ি ভাড়া করে কাজ চালাতে হয়।
পাঁশকুড়া কোলাঘাট ও ময়নার নদী ও খাল লাগোয়া এলাকায় ঘন জঙ্গলে বাঘরোল, গন্ধগোকুল, বিষধর সাপ, হনুমান, শেয়াল, নেউল ইত্যাদি প্রাণী প্রচুর সংখ্যায় রয়েছে। খাদ্যের খোঁজে কখনও কখনও তারা লোকালয়ে চলে আসে।
এলাকার মানুষজনের অভিযোগ, বন দপ্তরে খবর দিলেও গাড়ি ও উপযুক্ত সরঞ্জামের অভাবে বনকর্মীরা সময়মতো এলাকায় পোঁছতে পারেন না। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, বন দপ্তরের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগের স্থায়ী কোনও ফোন নম্বর না থাকায় প্রয়োজনীয় খবরটুকু পৌঁছে দেওয়া যায় না।
ফলে অনেক প্রাণীকেই বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়। এ ছাড়াও বনকর্মীদের উদাসীনতাও রয়েছে বলে অভিযোগ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বনাধিকারিক অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, ‘পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিসে কর্মী সঙ্কট রয়েছে। স্থায়ী অফিসারও নেই। এগরার রেঞ্জ অফিসার পাঁশকুড়ার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। অনেক সমস্যার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার।’