• এভারেস্ট জয় করে নামার সময় মৃত্যু রানাঘাটের পর্বতারোহী সুব্রতর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৬ মে ২০২৫
  • এভারেস্ট জয়ের সুসংবাদ আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বড় অঘটন। মাউন্ট এভারেস্ট থেকে নামার সময় মৃত্যু রানাঘাটের এভারেস্ট জয়ী সুব্রত ঘোষের। নেপালের পর্বতারোহণ সংস্থা ‘স্নোয়ি হরাইজন ট্রেকস অ্যান্ড এক্সপিডিশন’-এর সদস্য বোধরাজ ভান্ডারি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘উনি হিলারি স্টেপ থেকে নামতে চাননি।’ বৃহস্পতিবার মাউন্ট এভারেস্ট সামিট পয়েন্টের খুব কাছেই হিলারি স্টেপ সংলগ্ন অংশ থেকে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার হয়। সুব্রতের পাশাপাশি প্রাণ গিয়েছে ফিলিপিন্সের পর্বতারোহী ফিলিপি দুই স্যান্তিয়াগোর। এভারেস্টে ওঠার সময় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

    সুব্রত ঘোষের সঙ্গে ছিলেন আরও এক বাঙালি পর্বতারোহী রুম্পা দাস। এই মুহূর্তে তিনিও অসুস্থ, ক্যাম্প ৪-এ অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁকে। এজেন্সি সূত্রে জানা যায়, বুধবার আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি ভালো না থাকার কারণে ‘সামিট’ যাত্রায় বেশ কিছুটা দেরি হয়ে যায়। বেশ প্রতিকূলতার মধ্যে শীর্ষ আরোহণ করেন সুব্রত ও রুম্পা। প্রচণ্ড হাওয়ার দাপটের মধ্যেই ক্যাম্পে নেমে আসতে থাকেন তাঁরা। সুব্রত ও রুম্পা মাউন্টেনিয়ারিং অ‍্যসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগরের সদস্য।

    ৪৫ বছরের সুব্রত ঘোষ রানাঘাটের তিন নম্বর ওয়ার্ডের খিড়কি বাগান লেনের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই পাহাড়ের প্রতি তাঁর ভীষণ নেশা। করোনা অতিমারীর সময়েও রওনা দিয়েছিলেন পাহাড়ের দিকে। বাগদা ব্লকের অন্তর্গত কাপাসাটি মিলনবিথী হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সুব্রত ৩১ মার্চ রানাঘাট থেকে এভারেস্টের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রানাঘাটের বাসিন্দা, শিক্ষিকা রুম্পা দাস। গত পরশুদিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ক্যাম্প ফোর থেকে রওনা দিয়ে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট পৌঁছন।

    বৃহস্পতিবার দুপুরে এভারেস্ট জয় করে পর্বতের চূড়ায় ভারতের পতাকা তোলেন তাঁরা। এর পর ক্যাম্প ফোরে নেমে এসেছিলেন রুম্পা। কিন্তু সুব্রত তখনও নিরাপদ জায়গায় নামতে পারেননি। সাউথ সামিট এবং হিলারি স্টেপের মাঝে কোথাও আটকে ছিলেন তিনি। এর পর শুক্রবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, আচমকা খারাপ আবহাওয়ার কারণে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করায় নীচে নামার পথে সুব্রতর মৃত্যু হয়েছে। চার নম্বর বেস পৌঁছনোর সময় শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। যে শেরপা তাঁকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন তিনি ফিরে এসে জানিয়েছেন সুব্রত ঘোষের মৃত্যু হয়েছে।

    এভারেস্ট শৃঙ্গ থেকে খানিকটা নীচে, শৃঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব গা ঘেঁষা অংশটিই হিলারি স্টেপ। ১২ মিটারের ওই বড় পাথুরে অংশটি পেরোনো বেশ কঠিন পর্বতারোহীদের কাছে। ১৯৫৩ সালে স্যার এডমন্ড হিলারি প্রথম ওই অংশটি সফল ভাবে পেরোন এবং এভারেস্ট শৃঙ্গে পা রাখেন। এরপর তাঁর নাম অনুসারে অংশটির নাম হয়েছে ‘হিলারি স্টেপ’। সূত্রের খবর, সুব্রত ঘোষের দেহ বেসক্যাম্পে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। সুব্রত সম্প্রতি অরুণাচলের গোরিচন শৃঙ্গ জয় করেছিলেন।

    শুক্রবার সকালে পর্বতারোহীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানিয়েছেন রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধানসভার বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, তিন বছর পর বাঙালি পর্বতারোহী হিসাবে এভারেস্টের চূড়া জয় করেন সুব্রত ও রুম্পা। রুম্পা পঞ্চম বাঙালি কন্যা, যিনি এভারেস্টে জয়পতাকা ওড়ালেন। এর আগে শীর্ষে আরোহণ করেছেন শিপ্রা মজুমদার, ছন্দা গায়েন, টুসি দাস, এবং পিয়ালি বসাক। তবে ২০২১ সালে এভারেস্ট জয়ের চেষ্টা করেছিলেন রুম্পা। অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক সমস্যা। সুব্রতও আগে একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)