চার সপ্তাহের মধ্যে ২৫ শতাংশ ডিএ দিয়ে দিন, রাজ্যকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৬ মে ২০২৫
ডিএ মামলায় বড় নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আপাতত ২৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা দিয়ে দিতে বলল দেশের শীর্ষ আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে এই ডিএ দিতে বলা হয়েছে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এ কথা জানিয়েছে। যদিও এই মামলার চূড়ান্ত ফয়সালা এখনও হয়নি। আগামী অগস্টে হবে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি ছিল। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি করোলের মন্তব্য, ‘আপাতত ৫০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে দিন। নিম্ন আদালত, ট্রাইব্যুনাল ও কলকাতা হাইকোর্ট—এই তিন আদালতই রাজ্য সরকারি ডিএ বাড়ানোর ব্যাপারে রায় দিয়েছেন।’ সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি, যেহেতু এই মামলা এখন অনেকদিন গড়াবে, তাই অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে ৫০ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়া হোক।
রাজ্য সরকারের তরফে এই মামলার আইনজীবী ছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি আদালতে বলেন, ‘৫০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা তথা ডিএ দিতে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে রাজ্যকে। এমনিতেই রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা ভাল নয়। এখনই ৪০ শতাংশ হারে ডিএ দিতে গেলে মাসে অতিরিক্ত ৩ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপবে।’ তবে রাজ্যের আইনজীবীর যুক্তি মানতে চায়নি আদালত। বিচারপতি পাল্টা বলেন, ‘আপনাদেরই কর্মচারী। অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’
এরপর রাজ্যের তরফে যুক্তি দেখানো হয়, ‘ডিএ সরকারি কর্মীদের সাংবিধানিক অধিকার নয়।’ সুপ্রিম কোর্টের পাল্টা যুক্তি, ‘মহার্ঘ ভাতা সাংবিধানিক অধিকার নয় ঠিকই। কিন্তু তা বলে দিনের পর দিন টাকা না দেওয়াটাও কাজের কথা নয়।’ এরপর রাজ্যের আর্থিক দিক এবং সরকারি কর্মীদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, ‘৫০ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়া এখনই সম্ভব না হলে অন্তত ২৫ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়া হোক।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে খুশি রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘কর্মচারীদের ন্যায্য প্রাপ্য মহার্ঘভাতা। সেটা রাজ্য সরকার এত দিন অস্বীকার করছিল। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এটা স্বীকৃতি পেল যে, এটা আমাদের প্রাপ্য। বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। আশা করি শেষ হলে বকেয়া পুরো ডিএ আমরা পাব।’ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমাদের দাবি যে ঠিক ছিল, এত দিনে তার মান্যতা পেলাম। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হাইকোর্ট বা অন্য কোনও পর্যবেক্ষণে কোনও ভুল নেই। আমরা যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তায়, তাঁরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম।’
মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘৫০ শতাংশ ডিএ দিতে বলেছিল আদালত। রাজ্যের আইনজীবী জানান, এই পরিমাণ ডিএ দিতে হলে রাজ্য সরকারের কোমর ভেঙে যাবে। অনেক দিন আগেই অবশ্য এই সরকারের কোমর ভেঙে গিয়েছে। যা-ই হোক, বিচারপতি জানান, অন্তত ২৫ শতাংশ ডিএ দিতে হবে। কর্মচারীরা এত দিন ঘুরছিলেন। আশার কথা, এই রায়ের পর সামান্য কিছু হলেও তাঁরা তাঁদের অধিকারের স্বীকৃতি পেলেন।’
বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘভাতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। বকেয়া ডিএ দেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা। ২০২২ সালের ২০ মে হাইকোর্ট কেন্দ্রের সমতুল ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্যকে। এই নির্দেশের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার।
২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর রাজ্যের ডিএ মামলা প্রথম বার সুপ্রিম কোর্টে উঠেছিল। ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বরের পর থেকে বেশ কয়েকবার এই মামলার শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। অবশেষে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। আদালত জানিয়েছে, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে কোনও ভুল নেই। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার ২৫ শতাংশ আপাতত দিয়ে দিতে হবে। এই নির্দেশের পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘হাতে এখনও অর্ডার পাইনি। পাওয়ার পর যা বলার বলব।’
বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ১৮ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা পান। চলতি বছর মার্চ মাস পর্যন্ত তাঁদের ডিএ ছিল ১৪ শতাংশ। কয়েক মাস আগে বাজেট বক্তৃতার সময়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চার শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছিলেন। ১ এপ্রিল থেকে তা বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশ্য এই ডিএ বৃদ্ধির পরেও কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএর ফারাক খুব একটা কমেনি। কেন্দ্রীয় কর্মীরা ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ পান। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার ফারাক এখন ৩৭ শতাংশ।