মৃত বৃদ্ধার শেষকৃত্যের সমস্ত ভার নিলেন মুসলিম পড়শিরা
বর্তমান | ১৭ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, বহরমপুর: দুর্ঘটনায় মৃত হিন্দু বৃদ্ধার অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন জসিমুদ্দিন শেখ, তজিবুর শেখ, হালিম শেখ, সাহাবুর শেখরা। শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এলেন মুসলিম গৃহবধূরা। শুক্রবার সকালে গ্রামের মুসলিম পরিবারগুলি এককাট্টা হয়ে চাঁদা তুলে মৃতদেহের সৎকারের ব্যবস্থা করলেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরাই শবযাত্রার আগে মৃতের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিলেন। মৃতের নাম ভাগ্য হাজরা (৬৫)। বাড়ি হরিহরপাড়া থানার রামকৃষ্ণপুর। শেষযাত্রায় ভাগ্যদেবীর ভাগ্যে জুটল চার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বলিষ্ঠ কাঁধ। শেষকৃত্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শ্মশান ছাড়েননি জসিমুদ্দিন, তজিবুররা। শ্মশানে কান্নায় ভেঙে পড়া স্বজনহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে স্বান্তনা দিল গ্রামের মুসলিম পরিবারগুলি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ল হরিহরপাড়ার রামকৃষ্ণপুর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাস্তা পারাপারের সময় লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় ভাগ্য হাজরার। হরিহরপাড়া থানার পুলিস জানিয়েছে, ঘাতক গাড়িটি আটক করা হয়েছে।
গ্রামের নাম রামকৃষ্ণপুর হলেও সেই গ্রামে প্রায় ষাট শতাংশ পরিবারই মুসলিম। বৃহস্পতিবার ওই গ্রামের বাসিন্দা ভাগ্য হাজরা বিহারিয়া পাড়ায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সাড়ে ৫টা নাগাদ বাড়ি ফেরার পথে হরিহরপাড়া বহরমপুর রাজ্য সড়ক পারাপারের সময় বিহারিয়াপাড়া মোড়ে পণ্যবাহী লরি তাঁকে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ভাগ্য হাজরার। স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন অজিত হাজরা। কীভাবে কী করবেন কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। অজিত হাজরার কোনও রকমে দিন চলে। তাঁর পারিবারিক অবস্থা দেখে সাহায্যের জন্য সংখ্যালঘু পরিবারগুলিই আগে ছুটে আসেন। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে শবদাহ পর্যন্ত সব দায়িত্ব তাঁরাই কাঁধে তুলে নেন। অজিত হাজরা বলেন, গ্রামের মানুষ পাশে না দাঁড়ালে আমার পক্ষ্যে স্ত্রীর শেষকৃত্য করা সম্ভব ছিল না। সারাজীবন ওদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। এই ঋণ কোনওদিনই শোধ করতে পারব না।
অপারেশন সিঁদুর থেকে এখনও হাত গুটিয়ে নেয়নি ভারত। তবে আপাতত যুদ্ধ বিরতি চলছে। সন্ত্রাসবাদীদের খুঁজে বের করে নিকেশ করতে অভিযান চলছে। জসিমুদ্দিন শেখ বলেন, দুই দেশের রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক সম্পর্ক আমাদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। ধর্ম ভিন্ন হলেও আমরা ভারতবাসী। একই গ্রামের বাসিন্দা। তাই গ্রামের কোনও পরিবারের খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়ানো আমেদের কর্তব্য। সেটাই করেছি। তজিবুর শেখ বলেন, রামকৃষ্ণপুরে হিন্দু-মুসলিম সবাই একই সূত্রে বাঁধা। আজকের ঘটনা নতুন কিছু নয়। হিন্দুরাও বহুবার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরাও। রামকৃষ্ণপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর কোনওদিন দাগ পড়েনি। নিজস্ব চিত্র