চাকরিহারাদের অবস্থান অব্যাহত, পুলিস সহনশীল, আঘাত করেছে আন্দোলনকারীরাই: এডিজি
বর্তমান | ১৭ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিকাশ ভবনে বৃহস্পতিবার ধুন্ধুমারের পরও চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অবস্থান অব্যাহত। এবং তা ছিল সারারাতই। শুক্রবার সকালেও তাই গোটা চত্বরেরই উত্তাপ কমেনি। ফারাক ছিল একটাই, আগের দিনের মতো বিকাশ ভবনের কর্মীদের আটকানোর পথে হাঁটেননি আন্দোলনকারীরা। তবে নিরাপত্তার খাতিরে তাঁদের পরিচয়পত্র দেখে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিস। ঝুঁকি এড়াতে দুপুর ৩টের মধ্যে ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। হাজিরা ছিল বেশ কম। এরপরই ধিক্কার সভা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন।
এদিনের অবস্থানে বিরোধী দলগুলির সক্রিয় উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আর জি করের মতো এখানেও মতাদর্শ নির্বিশেষে সিপিএম, বিজেপি, নকশাল, এসইউসিআই—সব পক্ষই মিলেমিশে ছিল। এছাড়াও ছিল রাতদখল মঞ্চ, জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট এবং কিছু অতিবাম সংগঠন। গোয়েন্দাদের দাবি, আন্দোলনে অক্সিজেন দিতেই এমন কিছু করার পরিকল্পনা ছিল, যাতে পুলিস বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়। শিক্ষকদের একাংশকে এ ধরনের পরামর্শ জুগিয়ে চলেছে একটি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’। তার জেরেই শিক্ষকরা হঠাৎ বিকাশ ভবনের কর্মীদের আটকে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। যদিও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, বিকাশ ভবন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। এর জন্যই তাঁরা চাকরিহারা। তাই সারারাত আটকে রেখে কর্মীদের নিজেদের অভিজ্ঞতার সঙ্গেই আংশিক পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি নিয়ে মঞ্চের শীর্ষনেতা মেহবুব মণ্ডল অবশ্য বলেন, তাঁদের চাকরিচ্যুত হওয়ার পিছনে সব দলেরই ভূমিকা রয়েছে। তবে, দলীয় পতাকা ছাড়া কেউ যোগ দিতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া যায় না। লাঠিচার্জের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন পুলিসকর্তারা। শুক্রবার ভবানী ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম ও এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার বলেন, দশদিন ধরে চাকরিহারা শিক্ষকরা বিকাশ ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছেন। পুলিস-প্রশাসন সহযোগিতা করছে। তবে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চাকরিহারাদের একাংশ পুলিসের ব্যারিকেড ভেঙে বিকাশ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করে। জোর করে ঢুকতে গেলে পুলিসের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি হয়। গেট ভাঙার সময়ও কিন্তু বলপ্রয়োগ করা হয়নি। সাত ঘণ্টা ধরে পুলিস তাঁদের বুঝিয়েছে। তারপরেও পুলিস সংযত, সহনশীল ছিল। ধৈর্য ধরেছে। বিকাশ ভবনে ৫৫টি সরকারি অফিস রয়েছে। সন্ধ্যার পর সেই সমস্ত অফিসের কর্মীর বেরতে চান। কিন্তু আটকে রাখা হয় তাঁদের। এই অবস্থায় পুলিস সামান্য বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয়। প্রোটোকল মেনেই লাঠিচার্জ করা হয়েছে। পুলিসকর্তাদের দাবি, বেআইনি কাজটি করেছেন আন্দোলনকারীরাই। পুলিসের উপর চড়াও হন তাঁরাই। পুলিসকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়া হয়। আহত হন ১৯ জন পুলিসকর্মী। পুলিসের উপর হামলা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট সহ একাধিক অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে।