তৃণমূলে সাংগঠনিক পদে বড়সড় রদবদল, বীরভূম-কলকাতা উত্তরে কোর কমিটিতেই আস্থা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ মে ২০২৫
‘সময় মতো সাংগঠনিক রদবদল হবেই’, এই বার্তা আগেই ছিল। শুক্রবার সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চূড়ান্ত করে ফেললেন সেই তালিকা। শুক্রবার সর্বভারতীয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে দলের জেলা সভাপতি ও চেয়ারপার্সনদের নতুন তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই স্পষ্ট হল, বহুক্ষেত্রে আগাগোড়া রদবদলই করা হয়েছে সংগঠনে, যার মূল ভিত্তি ‘পারফর্মেন্স’। যদিও বীরভূম ও কলকাতা উত্তরে জেলা সভাপতির পদ বাদ দিয়ে কোর কমিটিতে আস্থা রাখল দল। পরোক্ষ ভাবে কেষ্টর বাঁশি কাড়লেন দলনেত্রী মমতা! দুই জেলাতেই দলের বিধায়কদের নিয়েই তৈরি হল কোর কমিটি। বীরভূমের ৭ সদস্যের কোর কমিটিতে অবশ্য রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল।
সেই সঙ্গে রয়েছেন অভিজিৎ সিনহা, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিনহা, বিকাশ রায়চৌধুরী, সুদীপ্ত ঘোষ, কাজল শেখ। এছাড়াও দুই সাংসদ শতাব্দী রায়, অসিত মাল কোর কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য। বীরভূম জেলা চেয়ারপার্সন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। একই মডেলে উত্তর কলকাতাতেও ৯ সদস্যের এই কোর কমিটিতে রয়েছেন বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, অতীন ঘোষ, শশী পাঁজা, পরেশ পাল, সুপ্তি পাণ্ডে, স্বর্ণকমল সাহা, স্বপন সমাদ্দার, জীবন সাহা, বিবেক গুপ্ত। এক্ষেত্রে জেলা চেয়ারপার্সন পদে রয়েছেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড় হিসাবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় পীযূষ পণ্ডা ছিলেন জেলা সভাপতি, এবারও তা অপরিবর্তিত রাখা হল। কিন্তু তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে বদল করা হয়েছে। সেখানে অসিত চট্টোপাধ্যায়ের পরিবর্তে জেলা সভাপতি করা হয়েছে সুজিত কুমার রায়কে। আবার জেলা সভাপতি বদল করা হল হাওড়াতেও। হাওড়া গ্রামীণে জেলা সভাপতি ছিলেন অরুণাভ সেনকে বহাল রাখা হলেও হাওড়া শহর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদে বদল করা হয়েছে। এই জেলায় কল্যাণ ঘোষের পরিবর্তে গৌতম চৌধুরীকে দেওয়া হয়েছে হাওড়া শহর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদ।
তবে হাওড়া সদরে চেয়ারম্যান পদে থাকছেন মন্ত্রী অরূপ রায়। আলিপুরদুয়ারের চেয়ারপার্সন গঙ্গা প্রসাদ শর্মা ও সভাপতি প্রকাশ চিক বড়াইক। কোচবিহারের চেয়ারপার্সন গিরিন্দ্রনাথ বর্মন এবং সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। জলপাইগুড়ির চেয়ারপার্সন খাগেশ্বর রায় এবং সভাপতি মহুয়া গোপী। উত্তর দিনাজপুরের চেয়ারপার্সন ও সভাপতি যথাক্রমে হামিদুর রহমান, কানাইয়ালাল আগারওয়াল। দক্ষিণ দিনাজপুরের চেয়ারপার্সন ও সভাপতি যথাক্রমে তোরাফ হোসেন মন্ডল ও সুভাষ ভাওয়াল।
বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারপার্সন ও সভাপতি যথাক্রমে মমতা ঠাকুর এবং বিশ্বজিৎ দাস। কলকাতা দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারপার্সন ও সভাপতি যথাক্রমে মণিশ গুপ্ত এবং দেবাশিষ কুমার। দমদম-ব্যারাকপুরের চেয়ারপার্সন ও সভাপতি যথাক্রমে নির্মল ঘোষ এবং পার্থ ভৌমিক। কিছু সাংগঠনিক জেলার ক্ষেত্রে এখনও চেয়ারপার্সন ও সভাপতির নাম প্রকাশিত হয়নি। সেই তালিকায় রয়েছে দার্জিলিং (সমতল), উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত। পাশাপাশি দলের রাজ্য কমিটির পদে রয়েছেন সমর মুখার্জি এবং উজ্জ্বল চ্যাটার্জী। সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন অরূপ চক্রবর্তী ও আশীষ হুদাইত। তাছাড়াও সম্পাদক পদে রয়েছেন অলোক চক্রবর্তী, অসিত বন্দোপাধ্যায়, অলোক মুখার্জি, চিত্তরঞ্জন মাইতি-সহ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচন মিটতেই এই রদবদলের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অভিষেক। দলনেত্রী মমতার সুপারিশ ক্রমে দলের বহু প্রতীক্ষিত এই সাংগঠনিক রদবদল ঘটল।