• ‘বড় হয়ে যুদ্ধে যাব!’ মুমতাজদের কাছে স্টার সোফিয়া-ব্যোমিকারাই
    এই সময় | ১৭ মে ২০২৫
  • এই সময়, ভগবানগোলা: ওদের আইডল সোফিয়া কুরেশি, ব্যোমিকা সিং। মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামের হাই মাদ্রাসার ছাত্রীরা বলছে, ‘আমরাও হতে চাই সোফিয়া কুরেশি। আমরাই হবো ব্যোমিকা সিং।’ ওরা জেনেছে, মুখের উপরে জবাব দিতে হয়। হস্টেলে ক্যারাটের ক্লাস করতে করতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে ওরা।

    বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ভগবানগোলা-২ ব্লকের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে পদ্মা নদী। পদ্মার পাড় লাগোয়া তপিডাঙা হাই মাদ্রাসায় সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রীদের জন্য হস্টেল, কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়।

    সেখানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মোট ১০০ জন ছাত্রী থাকে। তারা সকলেই ভগবানগোলা ১ ও ২ ব্লক এলাকার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। কারও বাবা পরিযায়ী শ্রমিক, কারও বাবা–মা আবার দিনমজুরি করেন।

    ভারত-পাক যুদ্ধে সিজ়ফায়ার ঘোষণার পরের দিন গত রবিবার ভারতের সেনাবাহিনীর সাফল্য কামনায় মিছিল বের করেছিল হাই মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রীরা। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে, ‘লং লিভ ইন্ডিয়ান আর্মি।’

    ওদের হাতে ছিল ‘ইন্ডিয়ান আর্মি জিন্দাবাদ’ লেখা ব্যানার। আর মুখে মুখে ফিরছিল কর্নেল সোফিয়া কুরেশি, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংদের নাম। হাইমাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মামুন আলবিরুনি বলেন, ‘হস্টেলের মেয়েদের কেরিয়ার কাউন্সেলিংয়ের ক্লাসে ভারত-পাক যুদ্ধের আবহে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

    সেখানে দেশপ্রেম, অপারেশন সিঁদুরের কারণ, সেনাবাহিনীর সাফল্য বিশেষ করে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংয়ের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।’

    তার পর থেকেই রাজিয়া, সুরাইয়া, নুরজাহান, হালিমা, মুমতাজদের মন জুড়ে কর্নেল ও উইং কমান্ডার। টিভিতে তাঁদের বক্তব্যও প্রেরণা জুগিয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওই কিশোরীদের। সুরাইয়া বলে, ‘স্যরের কাছ থেকে শুনে এবং টিভিতে দেখে আমরা এখন শুধুই ওঁদের দু’জনকে নিয়ে আলোচনা করছি।’

    শুধু আলোচনাই নয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রীরা। হস্টেল থেকে মিছিল বের করে গোটা তপিডাঙা গ্রাম ঘুরে দেশপ্রেমের বার্তা দেয় তারা। ব্যানার ও লোগো কী হবে, তা নিয়ে সবাই মিলে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়।

    মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিল দশম শ্রেণির রাজিয়া সুলতানা, মুমতাজ খাতুন, নুরজাহান খাতুন, নবম শ্রেণির সুরাইয়া খাতুন ও দ্বাদশ শ্রেণির হালিমা খাতুন। মিছিল শেষে আগামীর সোফিয়া কুরেশি ও ব্যোমিকা সিং হতে চেয়ে একে অন্যের হাতে হাত রেখে শপথও নিয়েছে তারা।

    হালিমা বলে, ‘আমরা দুর্বল নই। সপ্তাহে দু’দিন মঙ্গলবার ও রবিবার ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় আমাদের। লালবাগের এলাহিগঞ্জ থেকে প্রশিক্ষক আসেন হস্টেলে। সেই সঙ্গে নিয়মিত পুষ্টিকর ও সুষম খাবার থাকে আমাদের মেনুতে। আমরা এর আগে নেপালের মেচিনগর থেকে ক্যারাটেতে পুরস্কারও জিতে এসেছি। আমি সেনায় যোগ দিতে চাই। সুফিয়া কুরেশি হতে চাই।’

    নুরজাহান বলে, ‘পহেলগামের বৈসরণ ভ্যালিতে নিরীহ পর্যটকদের গুলি করে মারার খবর টিভিতে দেখে কেঁদেছি আমরা। শত্রু দেশ পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার দরকার ছিল। আমাদের সেনাবাহিনী যোগ্য জবাব দিয়েছে। আমরা খুশি হয়েছি। স্যরদের মুখে সেই সব শুনে সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান জানাতে মিছিল বের করার ভাবনা মাথায় আসে। সুফিয়া কুরেশি ও ব্যোমিকা সিং ম্যাম আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন।’

    ওরা সবাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে বলে মনস্থ করেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্নবাণ ধেয়ে যাচ্ছে হাই মাদ্রাসার শিক্ষকদের দিকে। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে ভর্তির জন্য কী করতে হবে, কোন ক্লাসের পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া যায়, শারীরিক কী ধরনের সক্ষমতা লাগে, উচ্চতা ও ওজন কত হতে হবে, লিখিত পরীক্ষায় কী কী আসে— এমন সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’

    দুই সাহসিনী স্বপ্ন দেখার দুঃসাহস জুগিয়েছেন অজপাড়া–গাঁয়ের কিশোরীদের!

  • Link to this news (এই সময়)