এই সময়: চাকরিহারা শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জের ঘটনায় আসরে নেমে পড়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের অন্দরেও।
প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিক্ষক নির্যাতন ইস্যুতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন সংগঠিত করবে তারা। যার সূত্রপাত হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিকাশ ভবনের বাইরে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ধর্নামঞ্চে ছুটে যান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তিনি মঞ্চ থেকে শিক্ষকদের লড়াইয়ে পাশে থাকার বার্তাও দেন। অর্থাৎ, চাকরিহারা শিক্ষকরা যে আন্দোলনকে এতদিন অরাজনৈতিক রাখার চেষ্টা করেছিলেন, তাতে এ বার রাজনীতির রঙ লাগালো।
তবে শুধু বিজেপি নয়, এ দিন বিকাশ ভবনের বাইরে সিপিএমের উপস্থিতিও চোখে পড়েছে। ধর্মতলায় শিক্ষক নির্যাতনের বিরুদ্ধে মিছিল করে এসইউসি। এই ইস্যুতে পথে নামার তোড়জোড় শুরু করেছে কংগ্রেসও।
চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনে বিজেপি আদৌ ভিড়বে কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরেই দ্বিমত ছিল। গেরুয়া শিবিরের একাংশের যুক্তি ছিল, অতীতে চিকিৎসকদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে গিয়ে মুখ পুড়েছিল বিজেপি নেতাদের।
মাসখানেক আগেই চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থান মঞ্চে হাজির হয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনতে হয়েছে দলীয় সাংসদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফলে কোনও অরাজনৈতিক আন্দোলনে আগ বাড়িয়ে না যাওয়াই ভালো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গেরুয়া শিবির।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বিকাশ ভবনের বাইরে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করার পরে বিজেপির অন্দরে দাবি ওঠে, আর দূর থেকে সংহতি না জানিয়ে সরাসরি আন্দোলনকারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
এ দিন সকালেও শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা অরাজনৈতিক আন্দোলন। না হলে আমরাই পুলিশের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতাম। শিক্ষকদের এ ভাবে মার খেতে দিতাম না। আমরা এটা নিয়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু করব। দলে আলোচনা করে আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করা হবে।’
সূত্রের খবর, এরপর বিকেলে বিষয়টি নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা করে শুভেন্দু চাকরিহারা শিক্ষকদের ধর্নামঞ্চ পৌঁছে যান।
শিক্ষকদের উপর পুলিশের লাঠি চালানোর নিন্দা করে সুকান্ত বলেন, ‘শিক্ষকদের উপর যে বর্বরোচিত আন্দোলন হয়েছে তা অতীতে কখনও দেখিনি। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। গোটা সমাজ নিন্দা করছে। আমার মনে হয় রাজ্যের সব শিক্ষককে এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা উচিত।’
তবে বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আন্দোলন যে কেউ করতে পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে আটকে রেখে নয়। আন্দোলনের জন্য কেউ নিজের বাড়ি ফিরতে পারবেন না, কেউ মায়ের ওষুধ নিয়ে যেতে পারবেন না, এটা তো হতে পারে না। আন্দোলন করতে হলে গান্ধী মূর্তির নীচে গিয়ে বসুন না, কেউ আটকাবে না।’