• খুশি সরকারি কর্মচারীরা, রাজ্য অপেক্ষা করছে লিখিত নির্দেশের
    এই সময় | ১৭ মে ২০২৫
  • এই সময়: বকেয়া ডিএ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশকে ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করে প্রধান মামলাকারী ‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়’। একই মত বাম সমর্থিত রাজ্য কো–অর্ডিনেশন কমিটিরও।

    রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও বলেছে, সুপ্রিম কোর্ট সরকারি কর্মচারীদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিল। তবে এ দিন রাজ্য সরকার বা তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন সুপ্রিম–নির্দেশ নিয়ে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য জানায়নি। তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, রায়ের কপি হাতে পেলেই এ নিয়ে মন্তব্য করা যাবে।

    ‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের’ তরফে সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় সংগঠনের সভাপতি শ্যামল মিত্রকে পাশে নিয়ে বলেন, ‘ডিএ যে সরকারি কর্মীদের অধিকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা অস্বীকার করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু তাঁর অবস্থানকে স্বীকৃতি দিল না।

    এর আগে কলকাতা হাইকোর্টও ডিএ–কে সরকারি কর্মীদের অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই সুপ্রিম কোর্টের এই অর্ন্তবর্তী রায় শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের নয়, অন্যান্য রাজ্যের সরকারি কর্মীদের অধিকারকেও স্বীকৃতি দিল।’

    বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করে শুধু ২৫ শতাংশ কেন, সব বকেয়া টাকাই মিটিয়ে দেওয়া উচিত রাজ্যের। এই টাকার অধিকার সরকারি কর্মচারীদের।’

    সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সরকারি কর্মীদের পরবর্তী আন্দোলনের দিশা দেখাচ্ছে। আমরা একে স্বাগত জানাই।’ রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার জন্য বামফ্রন্ট সরকার পঞ্চম বেতন কমিশন লাগুর সময়ে রোপা–৯ সংশোধন করে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বর্তমান রাজ্য সরকার যা অস্বীকার করছে। আজ সুপ্রিম কোর্টও তাকে স্বীকৃতি দিল।’

    রাজ্য সরকার অবশ্য সপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করার সময়ে তিনটি মূল যুক্তি তুলে ধরেছিল। প্রথমত, কেন্দ্র ও রাজ্যের ডিএ সমান হওয়া বাধ্যতামূলক বিষয় নয়। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব আর্থিক কাঠামো ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। তৃতীয়ত, কেন্দ্রের হারে রাজ্যকে ডিএ দিতে হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নমনীয়তা ক্ষুণ্ণ হবে। রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা বলছেন, আগামী দিনে শীর্ষ আদালতে এ নিয়ে বিস্তারিত শুনানি হবে।

    তবে এ দিন বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ যে প্রাথমিক অবস্থান নিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, রাজ্যের যুক্তি আদালত গ্রহণ করেনি। সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির বক্তব্য, রাজ্য সরকার মাঝেমধ্যে কিছু শতাংশ বাড়তি ডিএ দিয়ে থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। ২০২৪ সালে ৩ শতাংশ ও ২০২৫ সালের এপ্রিলে ৪ শতাংশ হারে ডিএ দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে যে হারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা পূরণ করার পক্ষে এই ডিএ যথেষ্ট নয়।

    যদিও তৃণমূলপন্থী স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ় ফেডারেশনের তরফে প্রতাপ নায়েক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কপি এখনও হাতে পাইনি। তাই এখনই কোনও মন্তব্য করতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তার সঙ্গে আমরা রয়েছি। তিনি কর্মচারী বিরোধী নন। তিনি বরাবরই সরকারি কর্মচারীদের ডিএ ডিয়েছেন, দিচ্ছেন, ভবিষ্যতেও দেবেন।’

    রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘কেন্দ্রীয় সরকারি হারে ডিএ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা যে সুযোগ–সুবিধা পান, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা কি তা পান? কেন্দ্র কর্মচারীদের পেনশন তুলে দিয়েছে। এ রাজ্যে সরকারি কর্মীদের পেনশন কিন্তু চালু রেখেছেন তৃণমূলনেত্রী।’

  • Link to this news (এই সময়)