জামিনের পরও কারাগারে বন্দি তিন আসামি, উৎকণ্ঠায় পরিবার
বর্তমান | ১৭ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: খাতায় কলমে জামিন মিলেছে। কিন্তু বন্দিদশা আর কাটছেই না আসানসোল সংশোধনাগারের তিন আসামির। বিচারক জামিন দেওয়া সত্ত্বেও মাসের পর মাস তাদের থেকে যেতে হচ্ছে লোহার গারদের মধ্যে। মুক্তি আটকে যাচ্ছে আইনের গেরোয়।
জানা গিয়েছে, ওই তিন বন্দির বৈধ পরিচয় পত্রই নেই কিংবা বানানো হয়নি। বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া কারা কর্তৃপক্ষ মুক্তি দিতে পারছে না। আইনি বেড়াজালে আটকে যাচ্ছে। বাধ্য হয়েই পরিবারের লোক নিয়ম করে জেলে এসে দেখা করে যান। মাসের পর মাস ধরে এই অমানবিক ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দ্রুত সমস্যা মিটবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে তিনজনের পরিবারকে।
শুক্রবার ছিল আসানসোল সংশোধনাগারের পূনর্মিলন উৎসব। কারাগারের বাইরে বসে আঁচলে করে চোখের জল মুছছিলেন বৃদ্ধা শম্পা ভট্টাচার্য। দুর্গাপুর থেকে আসানসোল ছুটে আসেন ছেলের টানে। রেলিংয়ের উপর থেকে একবার ছেলের মুখটা দেখলেই যেন শান্তি পান। মায়ের মন তো! শরীর অসুস্থ থাকলেও ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ট্রেনে-বাসে চড়ে। শম্পাদেবীর ছেলে সুজয় ভট্টাচার্য। বাড়ি দুর্গাপুরে। আক্ষেপ করে শম্পাদেবী বলছিলেন, ‘ছেলে অসৎ সঙ্গে পড়ে মাদক সেবন শুরু করল। টাকা জোগাড় করতে গিয়ে রেলের সামগ্রী চুরি করার অভিযোগ উঠল। জিআরপি গ্রেপ্তার করে কেস দিল। সেই থেকেই আসানসোল সংশোধনাগারে বন্দি। গরিব মানুষ আমরা। ছেলেকে ছাড়াতে বড় বড় উকিল দিলাম। মামলায় ছেলের জামিনও হয়ে গিয়েছে। তবু, কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। বলছে, ওর পরিচয়পত্র লাগবে।’ বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করে সংশোধনাগারের এক আধিকারিক বলেন, আপনার এলাকার কাউন্সিলারকে গিয়ে বিষয়টি বলুন। উনি নিশ্চয় কোনও একটা ব্যবস্থা করবেন। সবার আগে ছেলের রেসিডেন্সিয়াল শংসাপত্র সংগ্রহ করুন।
একই অবস্থা আরও দু’টি পরিবারে। কারও দু’মাস কারও তিন মাসে জামিন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিচয় পত্র না থাকায় মুক্তি পাচ্ছে না কারগার থেকে। জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও অভিযুক্তর জামিন হলে তাঁর নাম কর্তৃপক্ষের কাছে আসে। এরপর সেই নামের পরিচয় পত্র দেখে বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরিচয়পত্র না থাকলে নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে মুক্তি দেওয়া যায়না।
আসানসোল সংশোধনাগারের সুপারিনটেন্ডেন্ট চান্দ্রেয়ী হাইত বলেন, ‘আমাদের এখানে তিনজন বন্দির ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়েছে। পরিচয়পত্র না থাকার জন্য আমরা মুক্তি দিতে পারিনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সমস্যার বিষয়টি জানানো হয়েছে।’ জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব বিচারক আম্রপালি চক্রবর্তী বলেন, ‘ইতিমধ্যেই বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাঁদের অভিভাবকদের পরিচয়পত্রর উপর ভিত্তি করে পুলিসের একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। দ্রুত যাতে তাঁরা মুক্তি পায়, তাঁর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’