• চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন শালবনীর পান দোকানির ছেলে নিকুঞ্জ, বাধা অভাব
    বর্তমান | ১৭ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর : ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্র। মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও ভালো রেজাল্ট। এবার ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন শালবনী থানার সাতপাটি এলাকার বাসিন্দা নিকুঞ্জ পাল। কিন্তু বাধ সাধছে সংসারের অভাব। তাই ডাক্তারি হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ বাবা-মা। পাশাপাশি বিভিন্ন ডিগ্রি কোর্সেও পড়াশোনায় খরচ অস্বাভাবিক বেশি। চমকপ্রদ রেজাল্ট হাতে নিয়ে কী করবেন, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না নিকুঞ্জ। 

    গৌতম স্মৃতি সাতপাটি বীণাপানি বিদ্যামন্দির স্কুলের ছাত্র নিকুঞ্জ। তাঁর সাফল্যে গর্বিত গোটা গ্রামের মানুষ। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৩৬। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ছোট বয়স থেকেই ভালো রেজাল্ট করেন নিকুঞ্জ। মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও তিনি ভাল ফল করেছিলেন। প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬৩৪। নিত্য অভাবকে সঙ্গী করেই তিনি পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। বিভিন্ন স্কলারশিপের টাকায় খরচ চালাতেন। স্কুলের শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, ইচ্ছে শক্তির চেয়ে বড় কিছু নেই, তা আবারও প্রমাণিত হল। নিয়মিত পড়াশোনার মাধ্যমে সাফল্য এসেছে নিকুঞ্জর। ভালো রেজাল্টের জন্য একাগ্রতার প্রয়োজন। যা ওর মধ্যে ছিল। এদিন নিকুঞ্জ বলেন, বাবা ও মা সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া গৃহশিক্ষক ও স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতা কখনও ভোলার নয়। আগামীদিনে ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। প্রস্তুতি শুরু করেছি। পরিশ্রম করে ভালো রেজাল্ট করতে চাই। এছাড়া বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। নিকুঞ্জর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুবীর কুমার পাল বলেন, ওর সাফল্যে আমরা খুবই গর্বিত। ও মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও ভালো রেজাল্ট করেছিল। আগামী দিনেও যতটা সম্ভব ওকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করা হবে। নিয়মিত পড়াশোনা করলেই ভালো রেজাল্ট হবে বলে মনে করি।নিকুঞ্জর বাবা ভানু পাল ছোট্ট একটি পানের দোকান চালান। মা সুফলা পাল গৃহিনী। তাঁদের সংসার ওই দোকানের উপরেই নির্ভরশীল। ফলে, দোকান বন্ধ থাকলে আয়ও থমকে যায়। ভানুবাবুর চোখের সমস্যা রয়েছে। সাধারণ মানুষের তুলনায় তাঁর দৃষ্টি শক্তি কম। ভারী কোনও কাজ করতে পারেন না। দোকানই সম্বল। উচ্চ মাধ্যমিকে নিকুঞ্জ বাংলায় ৮২, ইংরেজিতে ৯২, পদার্থ বিজ্ঞানে ৮২, রসায়ন বিজ্ঞানে ৮৯, ও জীববিজ্ঞানে ৯১ নম্বর পেয়েছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। খেলাধুলোও করতেন তিনি ভালোবাসেন। এদিন ভানু বাবু বলেন, স্কুলের শিক্ষকও গৃহ শিক্ষকরা প্রচুর পরিমাণে ছেলেকে সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া আমার ছেলের পড়াশোনা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ত। আরও ভালো পরিকাঠামো পেলে উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্ট আরও ভালো করত। অঙ্কে নম্বর কম পেয়েছে। তবে ও অনেক দূর যাবে বলে ও আশাবাদী।  
  • Link to this news (বর্তমান)