জগন্নাথ মন্দির তৈরিতে দুর্নীতির নালিশ ১৫ দিনেই সিঁড়িতে ফাটল
আনন্দবাজার | ১৭ মে ২০২৫
বিতর্কের আবর্ত থেকে কিছুতেই যেন বের হতে পারছে না দিঘার নবনির্মিত ‘জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র।’ সরকারের দেওয়া আড়াইশো কোটি টাকায় গড়া মন্দিরের পাথরের সিঁড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে! শুরু হয়েছে বিতর্ক। মন্দির নির্মাণের কাজে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
শুরু থেকেই নামের সঙ্গে ‘ধাম’ লেখা নিয়ে বিতর্ক, বিগ্রহের কাঠ ও ভোগ রান্না নিয়ে অভিযোগ ছিল। এ বার তার সঙ্গে জুড়ল সিঁড়ি! যে জগন্নাথ মন্দিরকে আন্তর্জাতিক মানের বলে দাবি করা হচ্ছে সেই মন্দিরেই সিঁড়িতেই উদ্বোধনের পর দু’ সপ্তাহ কাটতে না কাটতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
বিজেপি নেতা সজল ঘোষ দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সিঁড়ির ফাটলের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছেন—‘এই ছবিটা পেলাম। সদ্য নির্মিত দিঘা জগন্নাথ কালচারাল ট্রাস্টের ছবি। যার সিঁড়িতে ইতিমধ্যে লম্বা ফাটল দেখা যাচ্ছে। সত্যি না মিথ্যে, সেটা হিডকো একটু তদন্ত করে দেখুক। নয়তো লোকে বলবে, এখানেও কাটমানি!’
ঘটনাকে কটাক্ষ করে নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘কমিশন নিয়ে বানিয়েছে হিডকো। সব ফেটে গিয়েছে। সজল ঘোষ পোস্ট করেছে দেখুন। সরকারি টাকায় মন্দির নির্মাণ করা যায় না। ওখানে সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে! পুরো মন্দির ফেটে গিয়েছে।’’ পাল্টা রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অখিল গিরির কটাক্ষ, ‘‘দিঘার জগন্নাথ মন্দির শুভেন্দু যেতে পারছেন না বলে অস্থির হয়ে উঠছেন। মন্দিরে যদি কিছু ঘটে থাকে তবে তা ট্রাস্ট এবং সরকার চিন্তাভাবনা করবে। কাটমানি নিতে তৃণমূল নয়, শুভেন্দুই বেশি অভ্যস্ত।’’
নতুন দিঘার ভোগী ব্রহ্মপুর মৌজায় গড়ে উঠেছে নতুন জগন্নাথ মন্দির। ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। তৈরি করেছে সরকারের সংস্থা হিডকো (হাউসিং ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন)। মন্দির এবং সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে রাজস্থানের বংশী পাহাড়পুর থেকে আনা গোলাপি রঙের বেলেপাথর দিয়ে। বৃহস্পতিবার দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে দেখা গেল, সিঁড়ির একাধিক জায়গায় ফাটল রয়েছে। অরুণ স্তম্ভ পেরিয়ে গর্ভগৃহের দিকে এগিয়ে গেলে রয়েছে পদ্মপুকুর। পুকুরের উত্তর দিকে সিঁড়িতে দু'জায়গায় ফাটল রয়েছে। কিছুটা অংশ জুড়ে লম্বালম্বি ওই ফাটল একেবারে স্পষ্ট।
নতুন মন্দিরে ফাটল হল কী ভাবে? হিডকো-র এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘যা জানানোর তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাবেন।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘বাইরে আছি। পরে কথা বলব।’’ আর মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব থাকা ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসের বক্তব্য, ‘‘এই অংশে সিঁড়ির দু’দিকে রেলিং বসানো হচ্ছিল। দু-একটি জায়গায় ফাটল হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থাকে নতুন পাথর বসাতে বলা হয়েছে।’’