• ‘ধৈর্য দেখানো হয়েছে , বিকাশ ভবনের কর্মীদের উদ্ধার করতেই লাঠিচার্জ’, বলল পুলিশ
    আনন্দবাজার | ১৭ মে ২০২৫
  • বিকাশ ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার রাতে চাকরিহারাদের উপর লাঠিচার্জের কথা স্বীকার করল পুলিশ। তবে কেন লাঠিচার্জ করা হয়েছে, তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) করেন সুপ্রতিম সরকার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। সেখানেই বৃহস্পতিবারের ঘটনা নিয়ে পুলিশের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়। বলা হয়েছে, পুলিশের তরফে যথেষ্ট ধৈর্য দেখানো হয়েছে।

    বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় বিকাশ ভবনের সামনে। বেলা ১২টায় তাঁরা বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দেন। দফতর ঘেরাও করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। বিকেলে চাকরিহারাদের তরফে মেহবুব মণ্ডল, চিন্ময় মণ্ডলেরা জানান, তাঁরা নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না। তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত ক্ষণ না এসে তাঁদের আশ্বস্ত করছেন, তত ক্ষণ বিকাশ ভবনের বাইরে অবস্থান চলবে। বেরোতে দেওয়া হবে না কর্মীদের। তবে তাঁদের খাবার আটকানো হবে না।

    বিকেল গড়াতেই পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যায়। রাতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। অভিযোগ, আচমকা পুলিশকর্মীদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয় বিকাশ ভবনের সামনে। রাত ৮টা নাগাদ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে বলপ্রয়োগ করে বলে অভিযোগ। ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। রাস্তার উপর শুয়ে পড়েন অনেকে। টেনেহিঁচড়ে তাঁদের সেখান থেকে সরানো হয়। পুলিশের এই বলপ্রয়োগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। তবে শুক্রবার পুলিশের তরফে জানানো হয়, বাধ্য হয়েই তাদের লাঠিচার্জ করতে হয়েছে।

    সুপ্রতিম বলেন, ‘‘পুলিশ প্রথম থেকেই সংযত ছিল। সাত ঘণ্টা পুলিশ আন্দোলনকারীদের কিছু বলেনি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অধিকার সকলের রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা নষ্ট হলে পুলিশকে পদক্ষেপ করতেই হয়। তবে পুলিশ অনেক ধৈর্য ধরেছিল।’’

    কেন লাঠিচার্জ করল পুলিশ, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সুপ্রতিম। তাঁর কথায়, ‘‘১০ দিন ধরে চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা পালা করে বিকাশ ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলেন। পুলিশ-প্রশাসন সহযোগিতা করেছে। তবে গতকাল পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চাকরিহারাদের একাংশ ব্যারিকেড ভেঙে বিকাশ ভবন চত্বরে ঢোকার চেষ্টা করেন। জোরপূর্বক ভেতরে ঢোকার চেষ্টা হয়। পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিও করা হয়। তবে তখনও পুলিশ সংযত ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে যাওয়ার পরও বিকাশ ভবনের কর্মীদের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছিল না। তাঁদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি এক জন অন্তঃসত্ত্বাও ছিলেন। বার বার তাঁরা বাড়ি যাওয়ার কথা বলা হচ্ছিল। পুলিশ আন্দোলনকারীদেরও সেই অনুরোধ করে। কিন্তু তাঁরা কর্ণপাত করেননি।’’

    পুলিশের দাবি, শুধুমাত্র বিকাশ ভবনের কর্মীদের বাইরে বার করতেই বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল। পুলিশের উপরই চড়াও হন আন্দোলনকারীদের একাংশ। এমনকি, প্রোটোকল মেনেই লাঠিচার্জ করা হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। যদিও সেই দাবি মানতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। রাজ্য পুলিশের সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে চাকরিহারা শিক্ষক চিন্ময় বলেন, ‘‘আমরা কোন‌ও বলপ্রয়োগ করিনি। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে চাকরি গিয়েছে। ইচ্ছে করে কেউ এখানে আন্দোলন করছে না। এখন ওরা প্রোটোকলের কথা বলছে। তবে যখন চাকরি স্বচ্ছ ভাবে দেওয়ার কথা ছিল তখন এই প্রোটোকল কোথায় ছিল?’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)