কান উৎসবে শিল্পী পরেশ মাইতি, লাল গালিচা, দেশজ শিল্প থেকে পিকাসো প্রসঙ্গ, উঠে এল কথায়
আনন্দবাজার | ১৭ মে ২০২৫
শর্মিলা ঠাকুরের উপস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা হয়েছে দেশ জুড়ে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাবেন, তাঁর অভিনিত ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ দেখানো হবে সেখানে— অনেকেই জেনেছেন সে কথা। তবে শনিবার আরও এক বাঙালি শিল্পীকে দেখবেন ফ্রান্সের কান উৎসবে উপস্থিতজন। তিনি চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে নিয়মিত যুক্ত নন। বাঙালি চিত্রশিল্পী পরেশ মাইতি সে উৎসবে যোগ দিচ্ছেন এই প্রথম। ভারতীয় শিল্পের আরও একটি দিক তুলে ধরবেন তিনি।
সাম্প্রতিক কালে প্রায় প্রতি বছরই বিশ্বখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে দেখা যায় মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র জগতের বহু তারকাকে। ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন থেকে দীপিকা পাড়ুকোন, কানের লাল গালিচার শোভা বৃদ্ধি করেছেন বহু তারকা। নানা সময়ে বাংলার চলচ্চিত্র তারকারাও উপস্থিত থেকেছেন সেখানে। তবে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব খানিকটা আলাদা। রবিবার, ১৮ মে, সেই লাল গালিচায় পা রাখবেন পদ্মশ্রী প্রাপ্ত এই চিত্রশিল্পী। সেখানে দেখানো হবে তাঁর কাজও।
চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে যাওয়ার আগে ফ্রান্স থেকে ফোনে নানা কথা ভাগ করে নিলেন পরেশ। দিন কয়েক আগেই সে দেশে পৌঁছে গিয়েছেন শিল্পী। আরও কয়েক জন শিল্পীর সঙ্গে নানা কাজে ব্যস্ত এখন তিনি। থাকছেন স্বয়ং পাবলো পিকাসোর গ্রামে। নাম স্যঁ পল ড ভস।
সবুজে ভরা সে এলাকা শিল্পীদের পীঠস্থান বলেই পরিচিত। সেখান থেকে ভিডিয়ো কলে আনন্দবাজার ডট কমকে বললেন, ‘‘কানের উৎসবে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা অন্য রকম হবে। এই প্রথম। তবে এখানে এসে ভাল লাগছে বেশ। জায়গাটি এতই সুন্দর। আর এ তো পুরোটাই শিল্পীদের এলাকা!’’
শনিবার, ১৭ মে, পরেশ যোগ দেবেন উৎসবের একটি আলোচনাসভায়। ভারতীয় শিল্পকলা ও নান্দনিকতা নিয়ে সেই কথোপকথনে তাঁর সঙ্গে থাকবেন বলিউডের শালিনী পাসি এবং অনুপমা চোপড়া। পরেশ বলেন, ‘‘আমাদের দেশ শিল্পের দেশ। এখানকার সংস্কৃতি বহুমাত্রিক। নিজের কাজের মাধ্যমে সব সময়েই সে কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কথাতেও তা-ই আবার প্রকাশ করতে চাই।’’ বিশ্বের নানা প্রান্তের শিল্পী ও শিল্পপ্রেমীরা উপস্থিত থাকেন কানের এই উৎসবে। তাই সেখানে নিজের দেশের সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনায় বসতে বিশেষ ভাবে আগ্রহী শিল্পী।
শুধু যে নিজের দেশের কথাই বলবেন সেখানে, তা কিন্তু নয়। সে দেশ থেকেও মন ভরে নিয়ে আসবেন শিল্পের রসদ। বরাবর তেমন ভাবনাতেই বিশ্বাসী তিনি। শিল্পী বললেন, ‘‘আমি তো ইউরোপের নানা জায়গায় সময় কাটাই। অন্যদের কাজ দেখি। নিজের কাজ দেখাই। তাতে শিল্প আরও সমৃদ্ধ হয়।’’ এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
যেখানে এখন তিনি রয়েছেন, সবুজে ঘেরা শান্ত সেই গ্রামে শুধু পিকাসো নন, বহু প্রতীতিবাদী শিল্পী থেকেছেন, কাজ করেছেন। নিজের তুলির টানে, জল-রঙে সে জায়গার প্রভাব যাতে ধরা থাকে, সে কথাও বেশ মনে রাখছেন পরেশ।
শিল্পী সে দেশে থাকবেন মে মাসের শেষ পর্যন্ত। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে আলাপ করবেন। নতুন কাজ করবেন। পরেশ বললেন, ‘‘এখানে অনেক গ্যালারি আছে। সে সব জায়গায় রাখা শিল্পকাজও ঘুরে দেখার ইচ্ছা আছে। তা ছাড়া, জায়গাটিই ভারি সুন্দর। এখানে হেঁটে-ঘুরে বেড়াতে খুবই ভাল লাগে।’’ তবে এ বার সে দেশে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়াই। তা নিয়ে বিশেষ ভাবনা রয়েছে শিল্পীর।