কৃষ্ণকে ভগবান ভাবি না, তিনি গণতান্ত্রিক! অবশ্য বামপন্থীদের মতোও হতে পারেন: নচিকেতা
আনন্দবাজার | ১৭ মে ২০২৫
সারা বিশ্বে নানা সমস্যার সমাধানের জন্য আজ কৃষ্ণকে দরকার। এমনটাই মনে করেন নচিকেতা চক্রবর্তী। তবে এই কৃষ্ণ ঈশ্বর বা ঠাকুর নন। এই কৃষ্ণ একজন গণতান্ত্রিক নায়ক। কৃষ্ণকে এমন ভাবে কল্পনা করেই শিল্পী তৈরি করেছেন নতুন গান, ‘কৃষ্ণ তোমার সঙ্গে যাব, চলার সোজা পথ হারাব কলকাতায়।’ গানটি ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। এই গানের নেপথ্যেও রয়েছে বিশেষ দর্শন।
গানটি সম্পর্কে বলার আগেই আনন্দবাজার ডট কমকে নচিকেতা বলেন, “আমি কৃষ্ণভক্ত। কিন্তু আমি কোনও রকমের পুজো-অর্চনা করি না। উপোসও করি না। এ ক্ষেত্রে আমি রবীন্দ্রনাথের মতো ভাবি, ‘তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি’। ধর্ম বলতে আমি গানটাকেই বুঝি। আর আমার নিজস্ব ধারণা রয়েছে কৃষ্ণকে নিয়ে।” কী সেই ধারণা? গায়ক বলেন, “কৃষ্ণকে ভগবান ভাবি না। তিনি একজন কর্মযোগী মানুষ। কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ঈশ্বর হয়ে উঠেছেন। কৃষ্ণের প্রবল ক্ষমতা যে আসলে ঐশ্বরিক, তা প্রমাণ করার জন্যই নানা রকম গল্পগাথা। এগুলো ব্রাহ্মণরাই করেছেন। কিন্তু কৃষ্ণ নিজে ব্রাহ্মণ, না কি ক্ষত্রিয় তাই তো স্পষ্ট নয়।”
এই গানে কৃষ্ণই নায়ক। কিন্তু তাঁকে কলকাতায় আসতে বলা হচ্ছে কেন? বর্তমান পরিস্থিতির জন্যই কি তাঁকে ডাকা হচ্ছে? নচিকেতার স্পষ্ট জবাব, “এখানে কলকাতা বলতে শুধুই আমার শহরকে বলিনি। গোটা বিশ্বকেই ভেবেছি। সারা বিশ্বেই অশান্তি চলছে। সকলের আগে আমার জায়গাটা পরিষ্কার হোক। কলকাতা তো আমার দেখা সবচেয়ে প্রিয় শহর। আবার এটাই আমার দেখা সবচেয়ে নোংরা শহর। আমার পাপ-পুণ্য সব কিছুর মধ্যেই কলকাতাকেই চাই। আর এখানে কৃষ্ণ বলতে চাণক্যের মতো একজন মানুষকে চাইছি। আবার এই কৃষ্ণ একজন বামপন্থীও হতে পারেন। আমি নিজেও এক সময়ে বামপন্থী ছিলাম। আজও আছি। আমি কার্ল মার্ক্স বা লেনিনকে যে ভাবে দেখেছি, সেই ভাবেই এই কৃষ্ণকে দেখতে চাই।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ওই মহামানব আসে’র মতোই যেন একদিন কৃষ্ণের আবির্ভাব হয়। এই কৃষ্ণই নেতৃত্ব দেবেন, এমনটাই আশা নচিকেতার। তাঁর কথায়, “এই কৃষ্ণের বাঁশিতে প্রেমের আখ্যান থাকবে না। নেতৃত্ব থাকবে। একটা পরিবর্তন আনবেন তিনি। সারা পৃথিবীই এমন পরিবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন।”
নচিকেতা যোগ করেন, “আমাদের এলাকায় কৃষ্ণকে সবচেয়ে জনপ্রিয় করে তুলেছেন শ্রীচৈতন্যদেব, কারণ কৃষ্ণ একজন গণতান্ত্রিক দেবতা। কুরুক্ষেত্র ময়দান, দ্বারকার অস্তিত্ব রয়েছে মানে তাঁরও অস্তিত্ব ছিল। তাই গানে লিখেছি, ‘কৃষ্ণ তুমি কি জানো, এ শহরে বাজায় বাঁশি লক্ষ-হাজার মানুষের দীর্ঘশ্বাস’। কৃষ্ণকে ঈশ্বর বানিয়েছেন দক্ষিণপন্থীরা। হতেই পারে, কৃষ্ণ আসলে ছিলেন একজন আরণ্যক।”