সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে করোনার বেহাল হয়ে পড়া উত্তরবঙ্গের একমাত্র স্পোর্টস লাইব্রেরি। হারিয়ে যাওয়া পাঠকেরা আবার আসতে শুরু করেছেন। শিলিগুড়ির কলেজ পাড়ার উদয়ন মেমোরিয়াল স্পোর্টস লাইব্রেরি চালু হয় ১৯৬৮ সালে।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম ক্রীড়াপ্রেমী উদয়ন রায়চৌধুরীর স্মৃতিতে তাঁর মামা আশিস মিত্র এই লাইব্রেরিটি তৈরি করেন। দীর্ঘদিন ব্যক্তিগত উদ্যোগে লাইব্রেরিটি চলত। অবশ্যই আশিসের এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন শিলিগুড়ির আপামর ক্রীড়ামোদী। দুপুর থেকে লাইব্রেরিতে ভিড় লেগে থাকত।
তখনকার দিনের সমস্ত স্পোর্টস ম্যাগাজিন ছাড়াও বিখ্যাত লেখকদের আত্মজীবনী পড়ার সুযোগ মিলত। সন্ধ্যার পরে একেবারে গমগম করত লাইব্রেরি। পরে লাইব্রেরিটি রাজ্য সরকার স্পনসর করে। একজন লাইব্রেরিয়ান দেওয়া হয়। সরকারি বরাদ্দও মিলতে শুরু করে।
ফলে নিয়মিত খেলাধুলোর বইপত্র ছাড়াও অন্যান্য বইও পাওয়া যেত। লাইব্রেরির পাশেই শিলিগুড়ির বয়েজ় স্কুল। খুব কাছেই শিলিগুড়ি কলেজ। ফলে ছাত্রছাত্রীদের ভিড় দেখে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে লাইব্রেরিতে চাকরি সংক্রান্ত বইপত্রও রাখা শুরু হয়। দিনে গড়ে একশোর বেশি পাঠকের নিত্য যাতায়াত ছিল।
স্থায়ী সদস্য ছিল প্রায় সাড়ে চারশো। এমন একটি লাইব্রেরি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে করোনার সময়ে। প্রথমে সরকারি বিধিনিষেধের জেরে লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে পাঠকের ভিড় কমতে শুরু করে। গত বছর রাজ্য সরকার লাইব্রেরিতে স্থায়ী লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ করার পরে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পাঠকের ভিড়ও বাড়ছে।
লাইব্রেরি ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ বলেন, ‘করোনা গোটা দেশেই লাইব্রেরিগুলোকে বিপাকে ফেলে দেয়। উদয়ন মেমোরিয়াল স্পোর্টস লাইব্রেরিকেও সেই ধাক্কা সামলাতে হয়েছে। তবে নতুন করে আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। পাঠকের ভিড় বাড়ছে। এই লাইব্রেরির সাহায্য নিয়েই একজন গবেষক উত্তরবঙ্গের খেলাধুলো নিয়ে গবেষণা করছেন।’
ব্যবসায়ীদের শহর বলে বদনাম থাকলেও খেলাধুলোয় শিলিগুড়ি বাসিন্দাদের আগ্রহ এখন গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। ঋদ্ধিমান সাহা এই শহরেরই ছেলে। মহিলা ক্রিকেটের জাতীয় স্তরের খেলোয়াড় রিচা ঘোষের বাড়িও এই লাইব্রেরির খুব কাছেই।
ফুটবল নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সমর্থকদের লড়াই কলকাতার চেয়ে কম নয়। শিলিগুড়িকে লোকে টেবিল টেনিসের শহর বলেই জানে। ঘরে ঘরে টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। ফলে এমন একটা শহরে একটা স্পোর্টস লাইব্রেরি গড়ে ওঠা খুবই স্বাভাবিক। আশিসের লাইব্রেরি তৈরির উদ্যোগে সমর্থনের অভাব মেলেনি। সেটাই ঝিমিয়ে পড়ে করোনার সময়ে।
লাইব্রেরিয়ান স্নেহা দাস বলেন, ‘এখন লোকজনের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের ছেলেমেয়েরা আসছে। নতুন করে স্থায়ী সদস্যপদ বিলি শুরু হয়েছে। এ বছর বইমেলা থেকে খেলাধুলো–সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপরে প্রচুর বইপত্রও কেনা হয়েছে।’