কিডনিকে সুরক্ষিত রেখে ল্যাপ্রোস্কপি দ্বারা নজির স্থাপন আর জি কর হাসপাতালে...
আজকাল | ১৭ মে ২০২৫
গোপাল সাহা: এবার নজির স্থাপন করল কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। কিডনিতে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ৬০ বছরের বৃদ্ধকে অস্ত্রোপচারের (ল্যাপরোস্কপি) মাধ্যমে উভয় কিডনিকে সুস্থ রেখে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরালেন আরজিকরের অধ্যাপক ইউরোলজি চিকিৎসক সন্দীপ গুপ্তা। উল্লেখ্য, কিডনিতে পাঁচ সেন্টিমিটারের এক টিউমার ক্যান্সারকে (ল্যাপ্রোস্ককপি) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ করে জীবনের মূল স্রোতে ফেরালেন ধন্বন্তরি চিকিৎসক।
চিকিৎসাশাস্ত্র মতে কিডনিতে কর্কট রোগ অর্থাৎ ক্যান্সার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার মূলত দুটটি পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। একটি ওপেন সার্জারি, অপরটি (মাইক্রো সার্জারি) ল্যাপরোস্কপি। কিডনিতে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার মূলত ওপেন সার্জারি হয়ে থাকে, (মাইক্রো সার্জারি) ল্যাপ্রোস্কপি অধিকতর ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম, আর এই ক্ষেত্রে এক প্রকার অসম্ভব বলেই মত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের। আর সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন চিকিৎসক সন্দীপ। এই ক্ষেত্রে অস্ত্রোপাচার ল্যাপরোস্কপি (মাইক্রো সার্জারি) সাফল্যের সঙ্গে এক বিরাট নজির স্থাপন হল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিডনিতে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কিডনি কেটে বাদ দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিরলতম ঘটনার নজির স্থাপন হল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের রোগে অস্ত্রপাচারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওপেন সার্জারীতে সময় লাগে দেড় থেকে দু'ঘণ্টা। যাকে চিকিৎসা শাস্ত্র মতে বলা হয় ওয়ার্ম ইউসিমিয়া টাইম (Warm ischemia time)। তবে সেটা কোনও ভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়, কারণ এতে কিডনির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মূলত, অস্ত্রোপচারের সময় আর্টারি ক্ল্যাম্প করা এবং খোলার যে সময়কাল তা স্বাস্থ্যকর ৩০ মিনিটের কম হলে খুবই ভাল। যা খুবই কঠিন, অন্যথায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে শেষ করাটা বাঞ্ছনীয়, না হলে কিডনির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। পরবর্তীতে অধিক মাত্রায় রক্তক্ষরণ ও হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর এই ক্ষেত্রে চিকিৎসক মাত্র ২৮ মিনিটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে একপ্রকার নজির স্থাপন করলেন। আরেক বড় নজির স্থাপন ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে, কিডনিকে সুস্থভাবে যথাস্থানে রেখে রোগীকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া সুস্থভাবে। যা একাধারে যেমন বিস্ময়কর, তেমন হাতের জাদুতেই এক প্রকার অসাধ্য সাধন।
এ বিষয়ে আজকাল ডট ইন সরাসরি কথা বলেছিল চিকিৎসকের সঙ্গে। তিনি বলেন, "এই ৬০ বছরের বৃদ্ধ ব্যক্তি আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসার কারণে এলে বেশ কিছু টেস্টের মাধ্যমে জানতে পারি তার পেটের বাঁদিকে একটি ৫ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার ক্যান্সার রয়েছে। এ ধরনের চিকিৎসায় কিডনি কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তবে এক ধরনের এক নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এসেছে যেখানে শুধুমাত্র কিডনির ওই অংশটুকুই বাদ দিয়ে দিলে রোগীকে তার কিডনি বাদ দিতে হয় না, সেটা খুবই কম জায়গায় হয়ে থাকে। এতে রোগী শারীরিক ভাবেও অনেক সুস্থ থাকে এবং মানসিকভাবেও সে ভেঙে পড়েন না। তাই আমরা সেই চেষ্টাই করেছি এবং ল্যাপ্রোস্কপির মাধ্যমে (মাইক্রো সার্জারি) রোগীর কিডনিকে বাঁচিয়ে, তাঁর কিডনির টিউমার অর্থাৎ ক্যান্সারকে বাদ দিয়ে সুস্থ করে তুলেছি। আর এই ধরনের অপারেশন কলকাতায় যেমন খুবই বিরলতম ঘটনা, তেমনি এই অস্ত্রোপচার ওপেন সার্জারি হয়ে থাকে। আর আমার কাছে এই অস্ত্রোপচার ল্যাপরোস্কপিকর মাধ্যমে করা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। অপারেশন হয়েছিল ১৪ মে, বুধবার। আজ তিনি উঠে বসেছেন এবং খাবার খাচ্ছেন, একই সঙ্গে তিনি অনেকটাই সুস্থ বোধ করছেন। আগামী দু'দিনের মধ্যে তাঁকে ছুটি দেওয়া হবে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য।"
এ বিষয়ে আমরা সরাসরি কথা বলেছিলাম আর জি কর হাসপাতালের মেডিকেল সুপার ও ভাইস প্রিন্সিপাল (এমএসডিপি) সপ্তর্ষি চ্যাটার্জি সঙ্গে। তিনি বলেন, "বিষয়টা আমি গতকালকেই জানতে পেরেছি। আমাদের আরজিকর হাসপাতালে এ ধরনের অস্ত্রপাচার সাফল্যের সঙ্গে সত্যিই আমারা খুব গর্বিত ও রাজ্যে এক নতুন নজির স্থাপন হল। রাজ্যে আরজি কর হাসপাতালে রোগীদের কাছে এক বিরাট বিশ্বাস ও ভরসার জায়গা তৈরি হল।"