নাম ভাঁড়িয়ে ইমাম ভাতা, কোচবিহার থেকে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৭ মে ২০২৫
অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে এক বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করল বিএসএফ। শুক্রবার বাংলাদেশ সীমান্ত পেরোনোর সময় গ্রেপ্তার আটক করা হয় তাঁকে। ধৃতের কাছ থেকে বৈধ পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। বিএসএফ সূত্রে খবর, ধৃত সেলিম আনসারি বাংলাদেশের কক্সবাজারের বাসিন্দা। অবৈধভাবে সীমান্ত পার করে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি। কুচলিবাড়ি থানার পুলিশ ধৃতের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
ধৃত সেলিমের কাছ থেকে ভারতের আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে। একটি প্যান কার্ডও উদ্ধার হয়েছে তাঁর কাছ থেকে। তবে কোনও ভোটার পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর জন্মের শংসাপত্র উদ্ধার করা গিয়েছে, যাতে স্পষ্ট লেখা তাঁর জন্ম বাংলাদেশে। বিএসএফ সূত্রে খবর, বছর চারেক আগে বেআইনি ভাবে সীমান্ত পেরিয়েই পশ্চিমবঙ্গে ঢোকেন তিনি। এতদিন মুর্শিদাবাদেই ছিলেন।
বিএসএফ সূত্রে খবর, সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় এক ব্যক্তিকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছিল। তাঁকে আটক করে সীমা চৌকিতে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই ধৃত ব্যক্তি স্বীকার করে নেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। চার বছর আগে তিনি অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর সেলিম আনসারি নামে ওই ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ।
সেলিম ভারতে ঢুকে আধার কার্ড ,প্যান কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশবই এবং একাধিক ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। সেলিম বেলডাঙায় মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। প্রথমে একটি সেলাইয়ের দোকানে কাজও করতেন। পরে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে তিনি মকরামপুর দক্ষিণপাড়া মসজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। একই সঙ্গে একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষকতাও শুরু করেছিলেন ধৃত ব্যক্তি।
ইমাম ভাতার জন্য আবেদনের সময় সমস্ত নথি না থাকায় স্থানীয় এক ব্যক্তির নামে আবেদন করেন তিনি। যা ভাতা ঢুকত, তাঁরা দু’জনে ভাগ করে নিতেন। বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি মোহিত ত্যাগী জানান, ‘ওই ব্যক্তিকে কুচলিবাড়ি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে সীমান্ত পার করতে সাহায্য করছিলেন যে দুই ভারতীয়, তাঁদের বিরুদ্ধেও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’
১২ দিন আগে বিহার যাবেন বলে বাড়ি থেকে বের হন সেলিম। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ যাওয়া উদ্দেশে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ সীমান্তে পৌঁছন তিনি। সেখানে বেআইনিভাবে কাঁটাতার পারাপার করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন সেলিম। প্রশ্ন উঠছে, এই ক’দিন সেলিম আনসারি কোথায় ছিল? পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত সেলিম আনসারির বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
সেলিম বলেন, ‘আমি এদেশে এসে ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছি। যদিও কিছু নথি এখনও তৈরি হয়নি। আমি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতাম এবং একটি মসজিদের ইমাম ছিলাম। বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতেই বাংলাদেশে ফিরছিলাম। দালালদের মোটা টাকা দিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছিলাম, তখনই বিএসএফ আমাকে ধরে ফেলে।’