কয়েক ঘণ্টা জলে থাকলেই জটিল রোগ সারবে! পূর্ব বর্ধমানে 'ওয়াটার থেরাপি'র রমরমা, কী বললেন চিকিৎসকরা? ...
আজকাল | ১৮ মে ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: অত্যাধুনিক চিকিৎসার যুগে গরম জল দিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে দুরারোগ্য ব্যধি নিরাময়ের দাবি করা হচ্ছে। কবিরাজের দাবি, এতে নাকি নিরাময় হচ্ছে হার্ট, কিডনি, লিভার, ব্রেস্ট টিউমার, জরায়ু টিউমার থেকে শুরু করে প্রেগনেন্সি সমস্যার।
'ওয়াটার থেরাপি' চিকিৎসার মাধ্যমে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা জলে থাকলে সব রোগের সমাধান হতে পারে। নিতে হচ্ছে না আর ওষুধ। শুধু তাই নয়, হাতে ও পায়ে ইলেকট্রিকের শক দিয়ে চলছে চিকিৎসাও। এমনি দৃশ্য দেখা গেল পূর্ব বর্ধমানের গাংপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। ব্যানারে বড় বড় করে লেখা রয়েছে 'জল চিকিৎসা'।
প্রশ্ন উঠছে, বর্তমান আধুনিক চিকিৎসার যুগে কীভাবে এই চিকিৎসা চালাচ্ছেন এক 'কবিরাজ'। চিকিৎসা করতে আসা কয়েকজন জানান, তাঁরা সমাজমাধ্যমে দেখে এই চিকিৎসা করাতে এসেছেন। এমনকী তাঁরা আগে যেসব ওষুধ খেতেন, তাও নাকি তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। চিকিৎসার ফল হাতেনাতে পাচ্ছেন বলে দাবি করছেন রোগীরা।
এ বিষয়ে থেরাপি সেন্টারের কর্ণধার কবিরাজ বিধানচন্দ্র মান্না জানান, এটা হল ওয়াটার থেরাপি অর্থাৎ জল চিকিৎসা। এটা বহু পুরনো এক চিকিৎসা পদ্ধতি। উন্নত চিকিৎসা আসার পর থেকে মানুষের মন এই চিকিৎসা থেকে সরে গেছে। ওয়াটার থেরাপিতে জ্বর থেকে শুরু করে ক্যানসারের চিকিৎসাও করা হয় বলে জানান বিধানচন্দ্র মান্না। এমনকী সুগার, থাইরয়েড, ব্লাডপ্রেসারের মত সমস্যার সমাধান হট ওয়াটার থেরাপির মাধ্যমে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তাঁর কথায়, ওয়াটার থেরাপিতে কোনও ওষুধ দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র জরিবুটি, নিম তেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আরও একটা পদ্ধতি রয়েছে 'জিরো ভোল্ট'। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে প্রেগনেন্সি নিয়ে ভুগছেন, তারও চিকিৎসা করা হয়। বেশিরভাগ রোগ চার মাসের মধ্যে নিরাময়ও হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তাঁর মতে, এটা নিয়ে স্বীকৃতি নেওয়ার কিছু নেই কারণ। এটা হচ্ছে পুরনো দিনের চিকিৎসা পদ্ধতি।
অন্যদিকে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় জানান, 'এভাবে জল দিয়ে চিকিৎসা পদ্ধতি আমার জানা নেই। সকলকে সচেতন হওয়া দরকার। আমি বিষয়টি স্বাস্থ্য দপ্তরে জানাব।' জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রমের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'এই চিকিৎসা বিষয়ে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই, আমি খবর নিয়ে দেখছি।'
পাশাপাশি এবিষয়ে প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ সৌম্যরাজ ব্যানার্জি বলেন, 'এটা একটা থেরাপি, এটা চিকিৎসা পদ্ধতি না। কিন্তু, এই ওয়াটার থেরাপি বা হাইড্রো থেরাপি করে কোনও রোগ সেরে যাচ্ছে, এরকম কোনও ব্যাখ্যা কোনও মেডিক্যাল সংক্রান্ত বই বা কোথাও কিছু লেখা নেই। কেউ যদি কিছু দাবি করে থাকেন, সেটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত দাবি। মেডিক্যালের কোনও ব্যাখ্যা নেই। কোনও প্রমাণ নেই এবং এটাকে মানা যাবে না। এটা বুজরুকি ছাড়া আর কিছু নয়।'