• জেলা হাসপাতালে রোগীদের বেড নেই, কারণ চলছে 'বৃদ্ধাশ্রম'! সরকার শুনছেন...
    ২৪ ঘন্টা | ১৮ মে ২০২৫
  • বাসুদেব চ্যাটার্জী: আসানসোল জেলা হাসপাতালে এমন রোগীর সংখ্যা অনেক। যাদের পরিবারের লোকেরা কিম্বা পাড়া প্রতিবেশীরা নানান রোগে রোগীকে ভর্তি করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আর তারা নিতে আসেন নি। হাসপাতালের রেজিস্টারে দেওয়া ঠিকানা এমনকি ফোন নম্বর ভুল। হয়ত আর কখনই এই অসহায় রোগীদের নিয়ে যেতে আসবে না পরিবারের কেউ। 

    আসানসোল জেলা হাসপাতাল যেন বিনা পয়সার 'বৃদ্ধাশ্রম' হয়ে উঠেছে। আর যার ফলে সমস্যায় পড়েছেন জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীদের বেড দখল করে মাসের পর মাস হাসপাতালে পড়ে আছেন বহু বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা। যার ফলে অন্য রোগীরাও পরিষেবা থেকে খানিকটা হলেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

    হাসপাতাল সূত্রে খবর বয়স জনিত কারনে অনেকে এমন আছেন, যাদের বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতাও নেই। ফলে উঠে বাথরুম যাওয়ারও শক্তিও নেই অনেকের৷ বিছানাতেই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলেন। যেহেতু তাদের কাছে টাকা পয়সাও নেই। তাই আয়া রাখার প্রশ্ন ওঠে না। সমস্যায় পড়েন নার্সরা।

    এমনকি অনেক বৃদ্ধ শরীরে জোর নেই৷ তাদের স্নান করানো, কাপড় জামা পরানো সমস্তটাই নার্সরা করে। নার্সরাই নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে তাদের পোশাকের ব্যবস্থা করেন। এই যে বহু পরিমান রোগী এই ভাবে আসানসোল জেলা হাসপাতালের বেড দখল করে পড়ে আছে, তাতে বিরাট সমস্যায় পড়েছেন আসানসোল জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীদের বের করেও দিতে পারেন না তাঁরা। আবার বেড দখল করে পড়ে থাকার জন্য অন্য রোগীকে সেই বেড দেওয়া যায় না।

    আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিল চন্দ্র দাস জানান ' এই সমস্যা বলে বোঝানো যাবেনা। পরিবার ছেড়ে দিয়ে গেছে এমন রোগী যেমন আছে, কিছু ভবঘুরে রোগীও আছে। অনেক লোক আত্মীয় সেজে যেমন দিয়ে যায় হাসপাতালে তেমনই অনেক পরিবারের লোকও দিয়ে যায়, তাঁদের সঙ্গে পরে যোগাযোগ করলে আর ফোনে পাওয়া যায় না। এমন অনেক ভবঘুরে পেসেন্ট আছে আমাদের এখানে। তাঁদের বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য অনেক ছেটাছুটি করতে হয় আমাদের তাতেও কোনও কাজ হয় না। এরফলে আমরা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ি।'

    এক অসুস্থ বৃদ্ধ বলেন, 'আমাকে আমার ভাইপো দিয়ে গেছে। তখন আমার খুব মাথা ব্যাথা করছিল। যখন যোগাযোগ করি তখন বলে এখনও নিয়ে যাওয়ার সময় আসেনি। এখন তাই অপেক্ষা করছি কবে আমায় নিয়ে যায় দেখি...। আমি আমার বড়দার কাছে ছিলাম, আমার বাড়ি জঙ্গিপুরে। এখন এমনি ভালো আছি। ভাইপো আমায় চিত্তরঞ্জন থেকে এনে এখানে ভর্তি করেছে।' 

    অন্য এক বৃদ্ধ বলেন, 'বাড়িতে সবাই আছে, আমায় কেউ এখনও অবধি নিয়ে যায়নি। কবে নিয়ে যাবে জানি না। আদৌ নিয়ে যাবে কিনা সেটাও জানি না।'

    আর একজন বৃদ্ধ বলেন, 'এখানে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাই। তাও আমায় কেউ নিয়ে যায় না।'    

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)