ট্যাংরার একই পরিবারের ৩ সদস্য ‘খুনে’ গ্রেপ্তার বড় ছেলে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই জেলে
প্রতিদিন | ১৮ মে ২০২৫
নিরুফা খাতুন: ট্যাংরার দে পরিবারের তিন সদস্য খুনের ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার পরিবারের বড় ছেলে প্রণয় দে। আজ, শনিবার এনআরএস হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। তারপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করে শিয়ালদহ আদালতে পেশ করা হয়। ৩০ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ট্যাংরায় অভিজাত দে পরিবারের দুই স্ত্রীর হাতের শিরা ও গলা কেটে ও কিশোরী মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর নাবালক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন দুই ভাই প্রণয় ও প্রসূন। বাড়ির ছোট ছেলে প্রসূন দে গ্রেপ্তারির পর জেলে রয়েছেন। তিনিই পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ। দাদা প্রণয় দে সঙ্গী ছিলেন ভাইয়ের। এদিন তাঁকেও গ্রেপ্তার করল পুলিশ। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর থেকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে এনআরএসে ভর্তি ছিলেন।
আপাতদৃষ্টিতে ধনী পরিবার। বিলাসবহুল বাড়ি, দামী গাড়ি, কী নেই! অন্তত আশপাশের লোকেরা এককথায় দে পরিবারকে বিত্তশালী বলেই জানতেন ট্যাংরা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত। অর্থের অভাব যে কখন দে পরিবারের ভীত নড়বড়ে করে দিয়েছিল, বাইরে থেকে তা বুঝতে পারেননি কেউ। তিনজনের দেহ উদ্ধার ও সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবটা প্রকাশ্যে আসতেই দে পরিবারের পরিচিতরা রীতিমতো আকাশ থেকে পড়েছিলেন।
পরিবারের এই অবস্থার জন্য মেক্সিকোর একটি এজেন্ট বা এজেন্সিকেই প্রণয় ও প্রসূন দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, মেক্সিকোর ওই সংস্থাটির সঙ্গে প্রণয় ও প্রসূনের সংস্থার বহু বছরের সম্পর্ক। তাঁদের কারখানায় তৈরি চামড়ার ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লাভস’-এর সিংহভাগই রপ্তানি করত মেক্সিকোর ওই এজেন্সিটি। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই গোলমাল শুরু হয়। গড়ে মাত্র কুড়ি শতাংশ টাকা দিয়ে বাকি টাকা ‘প্রতারণা’ করে এই সংস্থা। আবার রাশিয়া, মেক্সিকো, সিঙ্গাপুর থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার চামড়ার গ্লাভস ফেরতও দিয়ে দেয়। প্রণয় ও প্রসূন, দু’জনই আলাদাভাবে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন যে, ওই কারণেই গত ডিসেম্বর মাস থেকে তাঁদের ব্যবসার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। চামড়া অন্যান্য সরবরাহকারীদের বকেয়া টাকা মেটাতে পারছিলেন না। জানুয়ারিতে এমনও হয়, যে সরবরাহকারীরা তাঁদের রীতিমতো শ্রদ্ধা-ভক্তি করতেন, তাঁরাই অফিসে গিয়ে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। এমনকী ওই পাওনাদাররা তাঁদের কলার ধরে বাইরে নিয়ে যাবেন, মারধর করবেন, এমনও হুমকি দেন। এরপরই পরিবারের সদস্যদের খুন করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা।