সংবাদদাতা মালদহ: শিউরে ওঠা খুনের মামলায় মূল অভিযুক্তকে প্রাণদণ্ডের নির্দেশ শোনাল আদালত। শনিবার এই মামলার চূড়ান্ত রায় দেন মালদহের জেলা ও দায়রা বিচারক শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায়। মা-বাবা, ছোট বোন, ঠাকুমাকে নৃশংসভাবে খুন এবং দাদাকে খুনের চেষ্টার অপরাধে আইনের তিনটি ভিন্ন ধারায় মহম্মদ আসিফকে (২৩) ফাঁসির নির্দেশ দেয় আদালত। তবে আসিফের আইনজীবী মহম্মদ নাসের আলি বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে একমাসের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করবেন তাঁরা।
এই মামলা লড়তে রাজ্য সরকারের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় কলকাতা থেকে মালদহে আসেন। তিনি বলেন, আইনের দু’টি ধারায় আসিফকে যথাক্রমে সাত বছর ও দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা করেছে আদালত। অন্যদিকে, ৩০২ ধারায় ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মালদহের কালিয়াচকের গুরুটোলা ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। দুপুরে কড়া ঘুমের ওষুধ মেশানো আমের জুস খাইয়ে একই সঙ্গে বাবা জাওয়াদ আলি, মা ইরা বিবি, ছোট বোন রিমা খাতুন, ঠাকুমা আলেকনুর বেওয়া এবং দাদা মহম্মদ আরিফকে সংজ্ঞাহীন করে ফেলে আসিফ। পরে তাঁদের বাড়ির নির্মীয়মাণ অংশে টেনে নিয়ে যায়। প্লাইউড দিয়ে তৈরি কফিনে তাঁদের সংজ্ঞাহীন অবস্থায় শুইয়ে দিয়ে জলের কল ছেড়ে দেয় আসিফ। একে একে মৃত্যু হয় আরিফ বাদে বাকি চারজনের। কিন্তু আচমকা আরিফের জ্ঞান ফিরে আসায় কফিন থেকে উঠে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করে আসিফ। কোনও মতে শরীরে আঘাত নিয়ে পালিয়ে যান আরিফ। ইতিমধ্যে মা, বাবা, বোন ও ঠাকুমার দেহগুলি একটির ওপরে আরেকটি কবর দিয়ে রাখে আসিফ। ঘটনার পর থেকে দাদাকে তার প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে ক্রমশ ব্ল্যাকমেইলও চালিয়ে যেতে থাকে। কালিয়াচকে ফিরে আসার জন্য চাপও দেয়। এমনকী পরিবারের সদস্যদের খুন করার আগে নিজের নামে করে নেওয়া সব সম্পত্তির ভাগ দেওয়ার লোভও দেখায় আসিফ। ভাইয়ের নৃশংসতায় আতঙ্কিত হয়ে শেষ পর্যন্ত কালিয়াচকে ফিরে নিজের কাকুর সঙ্গে কালিয়াচক থানায় গিয়ে ওই বছরের জুন মাসে পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন আরিফ।
এরপরই তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে এসেছিল। উদ্ধার হয় চারটি দেহও। ময়নাতদন্তে জানা যায় সবাই খুন হয়েছিলেন। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে নগদ ২৩ লক্ষ, জমি, বাড়ি সব হাতিয়ে নিয়েছিল আসিফ। বাড়িতে বলত, সে নাসার একটি প্রকল্পে কাজ করছে। পরে তার বোনের বিয়ের জন্য পরিবার টাকা চাইতেই সবাইকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল ১৯ বছরের ওই তরুণ। ডার্ক ওয়েব দেখে নৃশংস খুনের পরিকল্পনা করে সে।
এদিন রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির থাকলেও কোনও মন্তব্য করেননি আসিফের দাদা আরিফ। তবে তাঁদের মামা মুরতুজ আলি বলেন, এই রায়ে আমরা খুশি। আদালতে তোলা হচ্ছে আসিফকে। - নিজস্ব চিত্র।