• সৌদিতে হাজিদের দেখভালের টোপ, লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা
    বর্তমান | ১৮ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: সৌদিতে হাজি সাহেবদের দেখভালের জন্য কাজের টোপ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরে। মোট ৮০ জন এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনের বাড়ি নন্দীগ্রাম থানার বিভিন্ন গ্রামে। প্রতারিতদের প্রত্যেককে কলকাতায় ঠাকুরপুকুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মেডিক্যাল টেস্ট  করানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট প্রত্যেকের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। তারপর ভিসা, ইমিগ্রেশন ও ফ্লাইটের খরচ বাবদ দফায় দফায় টাকা নেওয়া হয়েছে। ভিসা পাঠানোর পরই চেক করে দেখা যায়, সেটি ভুয়ো। প্রতারিতদের বেশ কয়েকজন নন্দীগ্রাম থানায় এফআইআর করেছেন। নন্দীগ্রাম থানার আইসি প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

    প্রতারিত হয়েছেন নন্দীগ্রাম থানার কৃষ্ণনগর গ্রামের শেখ আবদুল্লা। তিনি সৌদিআরবে তিন বছর হোটেলে কাজ করেছেন। দু’বছর ওমানে ছিলেন। তাঁর বিদেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। মহারাষ্ট্রের একটি ট্রান্সপোর্ট সংস্থা মোট ৮০ জনকে সৌদিআরবে নিয়ে যাবে, একথা জানার পর তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। সৌদিআরবে হাজি সাহেবদের তিন মাস দেখভাল করার জন্য আকর্ষণীয় রোজগারের সুযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল।  গত ৩ মে শেখ আবদুল্লা সহ নন্দীগ্রামের সাতজন কলকাতায় গিয়ে মেডিক্যাল টেস্ট করান। তারজন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা নেওয়া হয়। ভিসা, ইমিগ্রেশন ও ফ্লাইট বাবদ আরও সাড়ে সাত হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এভাবে কয়েক দফায় নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লক থেকে মোট ২৫ জনের মেডিক্যাল টেস্ট করানো হয়। তাঁদের মাথাপিছু আট থেকে ১৪ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া সহ বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ৮০ জনের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নন্দীগ্রামের শ্রীহরিগৌরী গ্রামের শেখ মুরসালিন একইভাবে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। এভাবে দাউদপুর, মহম্মদপুর, সাতেঙ্গাবাড়ি, সামসাবাদ সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন সৌদিতে কাজের সুযোগ পেতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। গত ১৩ মে আবদুল্লা সাহেব এ ব্যাপারে নন্দীগ্রাম থানায় এফআইআর করেছেন। তিনি বলেন, নন্দীগ্রামের আমড়াতলা গ্রামের একজন পরিচিত ব্যক্তি কর্মসূত্রে মহারাষ্ট্রে থাকেন। তিনিই সৌদিআরবে হাজি সাহেবদের দেখভালের জন্য ওই ট্রান্সপোর্ট সংস্থার একটি বিজ্ঞাপন প্রথমে দেখেছিলেন। তারপর সেই বিজ্ঞাপনে থাকা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে পাসপোর্ট ও ফটো হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান। এরপর যোগাযোগ চলতে থাকে। তাদের কথামতো কলকাতায় মেডিক্যাল টেস্ট করানো হয়। সেখানে প্রেসার, সুগার, ইসিজি, এক্সরে সবই পরীক্ষা হয়েছে। এছাড়াও রক্ত এবং মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আমাদের প্রত্যেকের হোয়াটসঅ্যাপে তার রিপোর্ট পাঠানো হয়। এরপর ভিসা এবং ফ্লাইটের টাকা নেওয়ার পরই ভুয়ো ভিসা পাঠানো হয়। তারপর থেকেই  ওই ফোন নম্বর বন্ধ। তখন বুঝতে পারি, প্রতারিত হয়েছি। পূর্ব নন্দীগ্রামের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যুবক প্রতারিত হয়েছেন। ওই তালিকায় হলদিয়ারও তিন-চার জন রয়েছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)