পণ্য সহ গাড়ি ছিনতাই রুখতে জিপিএস ব্যবহারের পরামর্শ
বর্তমান | ১৮ মে ২০২৫
শ্যামল সেন, হলদিয়া: গাড়ি ছিনতাই রুখতে শিল্প সংস্থাগুলিকে এবার পণ্যের মধ্য জিপিএস লুকিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছে হলদিয়ার পুলিস প্রশাসন। পণ্য প্যাকিং এবং গাড়িতে লোডিংয়ের সময় গোপনে একাজ করতে হবে। পাশাপাশি গাড়ি ও ড্রাইভারদের নথি অনলাইনে সঠিকভাবে যাচাই করে দেখার পরই গাড়ি ভাড়া করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শিল্প সংস্থা ও ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিগুলিকে। শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করে ছিনতাই এড়ানোর বিকল্প পথ খুঁজছে পুলিস। হলদিয়ায় একের পর পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কার্যত নাজেহাল হলদিয়ার পুলিস প্রশাসন। গত চার মাসে ৭টি ট্রাক হলদিয়া থেকে মাল বোঝাই করে অন্যত্র যাওয়ার পথে গায়েব হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হলদিয়া থেকে বিহার যাওয়ার পথে উধাও হয়ে যায় ৪৪ লক্ষ টাকার ভোজ্য তেল বোঝাই ট্রাক। এপ্রিল মাসে হলদিয়ার এক্সাইড থেকে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী যাওয়ার পথে উধাও হয় প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকার দামি ব্যাটারি বোঝাই ট্রাক। এপ্রিলের শেষে অসম থেকে কোক কয়লা নিয়ে পুরুলিয়া যাওয়ার পথে উধাও হয় ট্রাক। ট্রাকের মালিক হলদিয়ার সুতাহাটা থানা এলাকার। অভিযোগ, ট্রাকের মালিক নিজেই ওই ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত। নেপালের ১০০ টন পণ্য নিয়ে হলদিয়া থেকে উধাও হয়ে যায় তিনটি ট্রাক। ওই ছিনতাইকারীরা আবার গোপন ডেরা থেকে দর কষাকষি করতে থাকে। এরপর মে মাসে ৩৬ লক্ষ টাকার পণ্য নিয়ে আরও একটি ট্রাক গায়েব হয়েছে। সবমিলিয়ে ৭টি ট্রাক ও পণ্য মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
হলদিয়ার চারটি থানায় একের পর এক ছিনতাইয়ের অভিযোগ জমা পড়তেই নড়েচড়ে বসে পুলিস। পুলিসি অভিযান বাড়তেই অবশ্য ছিনতাই চক্রের পান্ডারা গ্রেপ্তার হচ্ছে বলে পুলিসের দাবি। পুলিস জানিয়েছে, গত এক মাসে তিনটি গ্রেপ্তারির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা হল, একদিকে ছিনতাই চক্র ধরা পড়ছে, অন্যদিকে ঠিক তার পরই অন্য চক্র সক্রিয় হয়ে ফের ছিনতাই করে পালাচ্ছে। এনিয়ে আরও কড়া আইনি ব্যবস্থার প্রয়োজন বলে দাবি তদন্তকারী পুলিস আধিকারিকদের। তাঁদের আক্ষেপ, আইনের ফাঁক গলে জেল থেকে বেরিয়ে আসছে ওই দুষ্কৃতীরা। বহু কষ্ট করে চক্রের পান্ডাদের ধরার পর তারা সেভাবে শাস্তি পাচ্ছে না। পুলিসের দাবি, ছিনতাইকারীরা একবার হাত পাকিয়ে ফেললেই আরও মরিয়া হয়ে ওঠে। দেখা যাচ্ছে, জেল থেকে দু’তিন মাসের মধ্যে ছাড়া পেয়েই নতুন করে অন্য এলাকায় লোকজন নিয়ে ছিনতাই গ্যাং তৈরি করে পুলিসকে নাস্তানাবুদ করছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক সপ্তাহে দু’টি আলাদা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৪ জন ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে ৩জন মানাকসিয়ার গ্যালভানাইজড স্টিল কয়েল বোঝাই একটি ট্রাকের নম্বর প্লেট বদলে নিয়ে পালাতে গিয়ে ভবানীপুর থানা এলাকায় ধরা পড়েছে। ধৃতরা স্বীকার করেছে, কয়েকমাস আগে তাদের গ্রুপ ভোজ্য তেলের গাড়ি ছিনতাই করেছে। অন্য একটি ঘটনায় ছিনতাইয়ের দায়ে গাড়ির মালিক সুতাহাটায় গ্রেপ্তার হয়েছে। ধৃত চোরাই পণ্য বেচে দিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা পেয়েছে বলে পুলিসকে জানিয়েছে। হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী বলেন, পর পর ছিনতাইকারীরা ধরা পড়ছে। আগের তুলনায় গত কয়েক মাসে এধরনের অপারেশনে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিল্প সংস্থাগুলিকে নিয়ে সম্প্রতি মিটিং করে গোপন জায়গায় পণ্যের মধ্যে জিপিএস লাগাতে বলা হয়েছে। যারা সতর্ক হয়েছে, তাদের ছিনতাই হচ্ছে না।