নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: ‘অভয়া পুকুর’। এটা এক কথায়, মাছদের ‘অভয়ারণ্য’। যেখানে জেলার মিষ্টি জলের লুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণের পাশাপাশি তাদের বংশবিস্তারের সুযোগ থাকবে। দুষ্প্রাপ্য মাছ সংরক্ষণে এমনই উদ্যোগ নিতে চলেছে হাওড়া জেলা পরিষদ। ‘অভয়া পুকুর’ তৈরির পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ইতিমধ্যেই দু’টি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি চাষিদের ছোট মাছ চাষে বাড়তি উৎসাহ জোগাবে বলে মনে করছে জেলা পরিষদ।
গঙ্গা ও তার বিভিন্ন শাখা তো বটেই, গ্রামগঞ্জের পুকুর, খাল-বিল একসময় ছোট-বড় বিভিন্ন দেশীয় মাছে পুষ্ট থাকত। দেশীয় মাছের উৎপাদনই ছিল গ্রামীণ হাওড়ার অন্যতম অর্থনৈতিক ভিত্তি। কিন্তু ক্রমাগত পুকুর বোজানো ও ছোট নদীগুলিতে নোনা জলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বহু প্রজাতির মাছকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছে। হাওড়ার খাল-বিল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে শোল, পুঁটি, চ্যাং, ছোট বাটা, রাইখর, মৌরলা, তিলে ট্যাংরা, ন্যাদস, পিয়ালি, খলসে, পয়ার মতো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকী পাবদা ও চিতলের মত নদীয়ালি মাছও এখন বিলুপ্তির পথে। এই মাছদের হারিয়ে যাওয়া যে নিছক গল্পকথা নয়, সেটা হাওড়ার মাছ বাজারগুলিতে গেলেই ঠাহর করা যায়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টন টন মাছ আসে হাওড়ার মাছ বাজারে। কিন্তু মাছের সেই তালিকায় মিষ্টি জলের ছোট মাছ দেখতে পাওয়া যায় না বললেই চলে। যেটুকুও মেলে, দাম শুনে চোখ কপালে ওঠে ক্রেতাদের। তাই বাংলার হারিয়ে যাওয়া এই মাছদের ফের খাল-বিলে ফেরাতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে হাওড়ায় দুটি ‘অভয়া পুকুর’ তৈরি করতে চলেছে জেলা পরিষদ।
জানা গিয়েছে, বিশেষ ধরনের এই পুকুর তৈরির জন্য আমতা ও উদয়নারায়ণপুরে জায়গা দেখা হয়েছে। অভয়া পুকুরে বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য দেশীয় মাছের চারা ছেড়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হবে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের নজরদারিতেই সংরক্ষণ করা হবে মাছদের। কয়েক দশক আগে গ্রামগঞ্জের পুকুরে যে ধরনের বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠত, সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে অভয়া পুকুরে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তাপস মাইতি বলেন, ‘স্থায়ী সমিতিতে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মৎস্যদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দুষ্প্রাপ্য দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। ডিপিআর তৈরির কাজ চলছে।’ জানা গিয়েছে, জেলায় মূলত ভেরি ও ডোবা পুকুর, এই দু’ভাবে জিওল ও সাধারণ মাছ উৎপাদন করেন মৎস্যচাষিরা। যে সমস্ত মাছ দ্রুত বাড়ে, সেসব মাছ চাষেই আগ্রহী হন তাঁরা। কারণ এতে দ্রুত লাভের টাকা ঘরে তোলা যায়। দুষ্প্রাপ্য দেশীয় মাছ উৎপাদনে চাষিদের উৎসাহ কম থাকার বিষয়টি মৎস্য দপ্তরেরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তবে ‘অভয়া পুকুর’ প্রকল্প সফল হলে দপ্তরের তরফে ছোট মাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে স্থানীয় চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নিজস্ব চিত্র