• বিকাশ ভবনে শিক্ষকদের অবস্থানে স্কুল পড়ুয়াদের উপস্থিতিতে বিতর্ক, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় দায় স্বীকার নিয়ে দ্বিধায় নেতৃত্ব
    বর্তমান | ১৮ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলনে এবার শামিল করা হল স্কুল পড়ুয়াদেরও। শনিবার জনা কুড়ি স্কুল পড়ুয়া আন্দোলন স্থলে আসে। তাদের অনেকে পুলিসের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দেয়। যদিও স্কুল পড়ুয়াদের এই আন্দোলনে যুক্ত করা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিভাবে আন্দোলনের রাশ যে ‘মঞ্চ’-এর হাতে, তাদের মধ্যেই এ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

    কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সহ বেশ কিছু বেসরকারি স্কুল থেকে পড়ুয়াদের আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, শিক্ষকরা যেহেতু সরকার পোষিত স্কুলের, সেক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুল থেকে পড়ুয়াদের আনা ‘গিমিক’ ছাড়া কিছুই নয়। একই সঙ্গে, নাবালক- নাবালিকা, বিশেষ করে পড়ুয়াদের এ ধরনের আন্দোলনে শামিল করাও রীতিমতো আইনবিরোধী পদক্ষেপ। যোগ্য শিক্ষক অধিকার মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক মেহবুব মণ্ডল বলেন, আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইনি। বরং সন্তানদের ঢাল হয়ে থাকে পিতারাই। তারা যে এখানে এসেছে, সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। হয়ত আমাদের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া, পা ভেঙে দেওয়ার মত ঘটনা দেখেই ওরা আমাদের পাশে থাকতে চেয়েছে। আরেক আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল অবশ্য ছাত্র-ছাত্রীদের কারা এনেছে, সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলেই দাবি করেছেন।

    এদিন সকাল থেকেই আন্দোলনকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল তুঙ্গে। আন্দোলনের রাশ বিজেপি না বামেদের হাতে থাকবে, তা নিয়ে তরজায় জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। তবে শনিবার বিকাশ ভবন ছুটি থাকায় এদিন আন্দোলনকারীদের সংখ্যাও ছিল শুক্রবার এর তুলনায় অনেক কম। কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল জনৈক ব্যক্তিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাজিয়ে পুলিসের হাতে ফুল দেওয়ায়। এদিন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে বলেন, যাঁরা টিভিতে মুখ দেখাতে চান, তাঁরাই সেখানে রয়েছেন। এটি আসলে আইনি লড়াই। সেভাবেই লড়তে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাদের স্কুলে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। তা না করে তাঁরা রাস্তায় রয়েছেন। আদালতে এটি আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। গোটা বিষয়টিকে নাটক বলতেও ছাড়েননি মেয়র। এদিন বারুইপুরে দলীয় এক অনুষ্ঠানে বিধানসভার অধ্যক্ষ তথা তৃণমূল বিধায়ক বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিকাশ ভবনে তালা ভেঙে ঢোকা, এটা সমীচীন হয়নি। শিক্ষকদের এটা উচিত হয়নি। তবে পুলিসও আরও একটু সংবেদনশীল হতে পারত। 

    এদিকে চাকরিহারাদের তরফে মেহবুব মণ্ডল বলেন, বৃহস্পতিবার এর আন্দোলনে যদি তাদের তরফে কোন গাফিলতি থেকে থাকে, তার জন্য তাঁরা ক্ষমাপ্রার্থী। প্রসঙ্গত একজন অন্তঃসত্ত্বা কর্মীকে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। সে প্রসঙ্গেই মেহবুব এ কথা বলেছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য। যদিও মঞ্চের আরেক নেতা চিন্ময় অবশ্য ওই কর্মীর দিদির সঙ্গে কথোপকথনের কল রেকর্ডিং এবং মেসেজ দেখিয়ে দাবি করেন, তাঁকে বের করে দেওয়ার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে সচেষ্ট ছিলেন। তাই জোর করে আটকে রাখার দাবি মিথ্যা। আজ রবিবারও বিকাশ ভবন বন্ধ। তাই বিশেষ কোন কর্মসূচি না থাকলেও, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলেই মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)