পর্যটন শিল্পের বিকাশে ‘রিভার ক্রুজ ট্যুরিজম’–কে পাখির চোখ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার ফলে গঙ্গায় ক্রুজের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পণ্যবাহী বার্জের সংখ্যা। আর সেটাই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে গঙ্গার ডলফিনদের কাছে। ক্রুজ এবং বার্জের প্রপেলারের ধাক্কায় বেঘোরে মারা যাচ্ছে ডলফিনরা।
পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে আগামী দিনে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে গঙ্গার দুর্লভ প্রজাতির ডলফিন। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শনিবার ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রককে চিঠি দিলেন কলকাতার পরিবেশকর্মী সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ।
ক্রুজ ও বার্জের মতো বড়বড় জলযানের হাত থেকে গঙ্গার বিলুপ্তপ্রাপ্ত ডলফিনদের বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। চিঠিতে সৌমেন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, গঙ্গার ডলফিন এমনিতেই একটি বিপন্ন প্রাণী।
তার উপরে যদি গঙ্গায় ক্রুজের সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে ডলফিনদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। ডলফিনদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে গঙ্গায় ক্রুজের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া ও তাদের গতি নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ডলফিনদের আবাসস্থলের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছেন।
সৌমেন্দ্রনাথ এই সময়’কে বলেন, ‘গঙ্গায় যে ডলফিন দেখা যায়, তার সংখ্যা এমনিতেই কমে এসেছে। তার একটা বড় কারণ হলো গঙ্গার দূষণ। এই অবস্থায় গঙ্গায় যে হারে ক্রুজের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে হয়তো আর গঙ্গায় ডলফিন দেখতে পাওয়া যাবে না।’
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গঙ্গায় যে ডলফিন দেখতে পাওয়া যায়, তাদের দৃষ্টিশক্তি নেই বললে চলে। সেজন্য তাদেরকে অন্ধ ডলফিন বলা হয়ে থাকে। তারা ইকোলোকেশন পদ্ধতিতে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে তাদের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে একটা ধারনা তৈরি করে নেয়। এ ভাবেই তারা জলে চলাচল করে এবং শিকার ধরে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটা আসলে বিবর্তনের ফল। গঙ্গার জল খুবই ঘোলাটে এবং নীচটা কর্দমাক্ত। সেই প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নিতে আনুমানিক ১২৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা চোখের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। সমুদ্রের জল তুলনায় পরিষ্কার। তাই সেখানকার ডলফিনরা স্পষ্ট দেখতে পায়।
কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা জানান, পরিবেশকর্মীদের আন্দোলনের ফলে ১৯৯০ সালে প্রথম গঙ্গার ডলফিনকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় ঢোকানো হয়। গঙ্গার ডলফিন বাঁচাতে সরকার থেকে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তার ফলে গঙ্গায় ডলফিনের সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। কিন্তু গঙ্গায় ক্রুজের সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় প্রচুর ডলফিন মারা পড়ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে গঙ্গায় ক্রুজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। সংস্থার এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ‘ক্রুজ থেকে যাতে কোনও ভাবেই গঙ্গায় দূষণ না ছড়ায় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তার জন্য ক্রুজে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। যে সব জায়গায় ডলফিনরা বসবাস করে, সেখানে ক্রুজের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে। তার পরেও অনেক সময় ডলফিনরা ভুল করে ক্রুজের প্রপেলারের সামনে চলে আসে। তখন বিপদ ঘটে।’