• আবাসের টাকা পেলেও তৈরি হয়নি বাড়ি, পুলিশকে দিয়ে চাপ
    এই সময় | ১৮ মে ২০২৫
  • প্রশান্ত ঘোষ, ভাঙড়

    প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় রাজ্যকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে সাধারণ মানুষরা অসুবিধায় পড়ায় বিকল্প হিসেবে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    তাতে বেনিয়ম ঠেকাতে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে নবান্ন। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে মনিটরিং কমিটি। তার পরেও বাংলার বাড়ি প্রকল্প রূপায়ণে বারবার হোঁচট খেতে হচ্ছে রাজ্য প্রশাসনকে।

    রাজ্য সরকার নির্ধারিত সময়ে বাংলা বাড়ির কাজ শেষ করতে চাইলেও এক শ্রেণির মানুষের অসহযোগিতার কারণে এখনও লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পোঁছানো যায়নি। অভিযোগ উঠছে, অনেকেই সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েও বাড়ি বানাচ্ছেন। তার জন্য তাঁরা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন।

    ফলে সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান নবান্নের কর্তারা। তাই বাধ্য হয়ে এ বার পুলিশকে দিয়ে উপভোক্তাদের উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিল প্রশাসন। যাঁরা টাকা নিয়ে ফেলে রেখেছেন, তাঁদেরকে চাপে রাখতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে হানা দিচ্ছেন ব্লক আধিকারিকরা।

    ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের শানপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চণ্ডীহাট এলাকার বাসিন্দা ক্ষুদিরাম বসু গত ডিসেম্বর মাসে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে টাকা পেয়েও একটা ইটও গাঁথতে পারেননি। পেশায় মুদি দোকানদার ক্ষুদিরামের বক্তব্য, যে জমিতে বাড়িটা করার কথা ছিল, তার মালিকানা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। সেই কারণেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

    শানপুকুর পঞ্চায়েতেরই উত্তর কাশীপুর মৌজার খন্নেরপোলের বাসিন্দা গীতা দাসের অ্যাকাউন্টে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রথম কিস্তি বাবদ ৬০ হাজার টাকা ঢুকেছে পাঁচ মাস আগেই। বাড়ি তৈরির জন্য ভিতও খোঁড়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর এক প্রতিবেশী বাড়ি তৈরিতে বাধা দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে থানা-পুলিশ হয়েছে। ব্লক অফিসেও জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও সমাধান মেলেনি।

    এগুলো অবশ্য কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এরকম ভুরি ভুরি নজির রয়েছে, যেখানে বাংলার বাড়ির টাকা পেয়েও ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। কেউ আবার ঘরের টাকা অন্য খাতে খরচ করে ফেলেছেন। ফলে ফাঁপরে পড়েছে প্রশাসন।

    এ বার প্রথম থেকেই বাংলার বাড়ি প্রকল্প রূপায়ণে শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের কোনও ভাবেই জড়ানো হয়নি। তার বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্লক প্রশাসনকে। ফলে ব্যর্থতার দায় চাপছে ব্লক প্রশাসনের উপরেই। ব্লকের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, যাঁরা টাকা পেয়েও এখনও বাড়ি বানাননি, তাঁদেরকে ব্লক অফিস থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও কোনও লাভ হয়নি।

    তাই এ বার বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবাসের টাকা পেয়েও কেন ঘর হয়নি, তার খোঁজ নিতে পুলিশকে সঙ্গে উপভোক্তাদের বাড়িতে যাচ্ছেন ব্লক আধিকারিকরা। ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত এলাকায় এই অভিযান শুরু হয়েছে। এর জন্য উত্তর কাশীপুর, পোলেরহাট ও কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা থেকে রোজ পুলিশ চাওয়া হচ্ছে।

    ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে বাংলার বাড়ির জন্য প্রায় ১৬ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। তার মধ্যে পোলেরহাট ২, চালতাবেড়িয়া ও শানপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বাড়ি করার জন্য প্রত্যেকেই মাথাপিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবেন। প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হবে ৬০ হাজার টাকা। বাড়ির কাজ লিন্টন পর্যন্ত এগলে দ্বিতীয় কিস্তির ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।

    ইতিমধ্যেই মোট ৭৬২৭টি পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আবাসের টাকা বরাদ্দ হয়েছে ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকে। অভিযোগ, সাড়ে সাত হাজার মানুষ ঘর তৈরির কাজ শুরু করলেও এখনও ১০৪টি পরিবার কাজ শুরু করেনি। তাঁদেরকে বাগে আনতেই পুলিশের সাহায্য নিতে হচ্ছে।

    ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের বিডিও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েও যাঁরা বিভিন্ন কারণে ঘর করতে পারেননি তাঁদেরকে সাহায্য করার জন্য পঞ্চায়েত সদস্য, ব্লকের কর্মী, পুলিশ, সবাই মিলে টিম করে বাড়িতে ভিজ়িট করছেন, যাতে উপভোক্তারা দ্রুত বাড়ির কাজ শুরু করতে পারেন।’

  • Link to this news (এই সময়)