• টাকা নেই, এই যুক্তি খাটে না, ছ’সপ্তাহে মেটাতে হবে ২৫% বকেয়া
    এই সময় | ১৮ মে ২০২৫
  • এই সময়: তিন মাস নয়, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র ন্যূনতম ২৫ শতাংশ মেটাতে হবে ছ’সপ্তাহের মধ্যে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কারোল ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ ডিএ মামলার শুনানি চলাকালীন তিন মাসের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র এক চতুর্থাংশ মেটানোর কথা মৌখিক ভাবে জানিয়েছিল।

    বেঞ্চের অন্তর্বর্তী নির্দেশ শনিবারই সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড হয়েছে। তাতে আদালত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আইনজীবীর প্রাথমিক সওয়াল জবাব শেষে স্পষ্ট বলেছে, কলকাতা হাইকোর্ট ২০২২-এর ২০ মে এবং ২২ সেপ্টেম্বর এই মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার ভিত্তিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ বাবদ যা প্রাপ্য হয়, সেটার অন্তত ২৫ শতাংশ ছ’সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে।

    শুক্রবার শুনানি চলাকালীন রাজ্য সরকারের তরফে দুই কৌঁসুলি অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও হুজ়েফা আহমেদি একাধিক বার বলেছিলেন, বকেয়া ডিএ দিতে গেলে রাজ্যের আর্থিক অবস্থার উপরে প্রবল চাপ পড়বে, রাজ্যের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। বিচারপতি কারোল ও বিচারপতি মেহতার বেঞ্চ এই যুক্তি শুনানির সময়েই উড়িয়ে দেয়।

    লিখিত নির্দেশেও বেঞ্চ বলেছে, ‘এর আগে (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ) ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টও পঞ্চম বেতন কমিশন অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের ডিএ পাওয়ার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর জন্য ফান্ডের অভাবের যুক্তি ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টও খারিজ করে দিয়েছে।’

    আদালত জানিয়েছে, গোটা মামলার সম্পূর্ণ শুনানি শেষে কী হবে, তার সঙ্গে এই বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দেওয়ার নির্দেশের কোনও সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি এই মামলার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পক্ষের অধিকার বা তাদের যুক্তির সঙ্গেও অন্তর্বর্তী নির্দেশের কোনও যোগ নেই।

    ২০১৬ সালে ডিএ মামলার শুনানিতে প্রথম থেকেই যে প্রশ্নটা উঠেছিল, তা হলো, এটা কি আদৌ সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার? রাজ্য সরকারের তরফে যুক্তি ছিল, এটা সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়, ডিএ হলো ‘দয়ার দান’।

    প্রথমে রাজ্যের ট্রাইব্যুনাল বা স্যাট রাজ্যের এই অবস্থানে সায় দিলেও পরবর্তী সময়ে তা কলকাতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ হয়। হাইকোর্ট সরকারি কর্মচারীদের অধিকারকেই স্বীকৃতি দেয়। আবার মামলা ফেরত যায় স্যাটে।

    তারপর থেকে স্যাট ও হাইকোর্ট মিলিয়ে অন্তত ছ’বার বকেয়া ডিএ-র প্রশ্নে জয় পেয়েছেন সরকারি কর্মচারীরাই। হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে যে মামলা করেছে, সেখানেও যে মূল প্রশ্নটা তোলা হয়েছে, তা হলো— ডিএ কি সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে?

    বিচারপতি কারোল ও বিচারপতি মেহতার বেঞ্চের অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘অন্য আরও কয়েকটা বিষয়ের মতো ডিএ কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার কি না, সেটাও আদালতের বিবেচনার জন্য তোলা হয়েছে। আমরা সেটা বিবেচনা করব। কিন্তু সেটা বিবেচনা করার মধ্যবর্তী সময়ে এই বকেয়া নিয়ে কর্মচারীরা অনন্তকাল প্রতীক্ষা করবেন, সেটা হতে পারে না।’

    আইনজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, মামলার রায় যাই হোক না-কেন, এই টাকাটা ছ’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে মেটাতেই হবে। তা না-হলে তা নিশ্চিত ভাবে আদালত অবমাননার সমতুল বলে ধরতে হবে। এই সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী নির্দেশের উপরে কোনও ‘রিভিউ’ বা ‘মডিফিকেশন’ অ্যাপ্লিকেশন করাও আইনি ভাবে কঠিন। শীর্ষ কোর্ট জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে তাদের বক্তব্য চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে।

    এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ১ এপ্রিল, ২০০৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত সময়কালে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ আগামী ২৭ জুনের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হলে যে ১০ হাজার ৪৪২ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা প্রয়োজন, সেটা এখন কোথা থেকে আসবে? রাজ্যই বা এখন কী করবে? রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘রায়টা ভালো করে পড়ে, বিশ্লেষণ করে তারপরে এ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’

    রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘যে সরকারি কর্মচারীরা এতদিন তৃণমূল সরকারের কাছে প্রতারিত হয়েছেন, তাঁরা যাতে তাঁদের ন্যায্য প্রাপ্য পান, সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। তাই ডিএ মামলার প্রথম দিন থেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বিজেপি যুক্ত ছিল।’

  • Link to this news (এই সময়)