• স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ, তবু পদে যোগ দিতে পারছেন না ৮৭১ চিকিৎসক! আরজি কর নিয়ে পথে নামায় কি কাজে খেসারত
    আনন্দবাজার | ১৮ মে ২০২৫
  • স্নাতকোত্তর স্তরে উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছেন। কাউন্সেলিংও শেষ। তার পরেও সিনিয়র রেসিডেন্ট (এসআর) পদে যোগ দিতে পারছেন না ৮৭১ জন চিকিৎসক-পড়ুয়া। সূত্রের খবর, তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র আটকে রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরে। কী কারণে আটকে রয়েছে তা স্বাস্থ্য দফতরও তাঁদের কাছে স্পষ্ট করছে না বলেই অভিযোগ ওই চিকিৎসক-পড়ুয়াদের। যদিও খোদ স্বাস্থ্য প্রশাসনের অন্দরের খবর, ওই চিকিৎসক-পড়ুয়াদের সিংহভাগই আর জি কর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই শীর্ষ স্তরে এমন অনীহা। এহেন পরিস্থিতিতে চিকিৎসক মহলের একাংশের প্রশ্ন, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনও রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও কি ধীরে হলেও ‘প্রতিহিংসা’র পথেই হাঁটছে রাজ্য প্রশাসন? স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য অভিযোগ অমূলক বলেই দাবি করেছে।

    আর জি কর আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অনিকেত মাহাতোর কথায়, ‘‘অনুমোদন কেন মিলছে না তা জানতে স্বাস্থ্য ভবনে গেলেও স্পষ্ট কোনও উত্তর মিলছে না। ৮৭১ জনের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। সেই কারণেই প্রশাসনের এমন মনোভাব বলে আমরা মনে করছি।’’ গত ডিসেম্বরে স্নাতকোত্তর স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়েছিল। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। কাউন্সেলিংয়ের জন্য ৬ মার্চ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল। ২৫ মার্চ সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ওই ৮৭১ জনের মধ্যে কে কোন কলেজে ‘এসআর’ পদে যোগ দেবেন তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এপ্রিলের প্রথম দিকে ওই নিয়োগের ফাইল নবান্নে পাঠানো হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও অনুমোদন মেলেনি। ফলে ওই স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণেরা কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। মিলছে না বেতনও। নিয়মানুযায়ী, স্নাতকোত্তর স্তরে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে তিন বছরের বন্ড পোস্টিংয়ে ‘এসআর’ পদে থাকতে হয়।

    স্বাস্থ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এখন সিনিয়র রেসিডেন্ট পদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতে যোগ দেওয়ার অনুমোদন না মেলায় ধাক্কা খাচ্ছে জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলির রোগী পরিষেবাও। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা আশফাকউল্লা নাইয়ার কথায়, “তিন বছর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়েও তা প্রয়োগ করতে পারছি না। বন্ড থাকায় বাইরেও কোথায় কাজ করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আমাদের কেরিয়ারে যেমন মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।”

    সমস্যা আরও রয়েছে। স্নাতকোত্তর স্তরে উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই অনেকে পরবর্তী স্তরে উচ্চ শিক্ষার জন্য ‘নিট-এসএস’ (নিট-সুপার স্পেশ্যালিটি) পরীক্ষা দেন। জানা যাচ্ছে, সেই পরীক্ষার ফলাফলও বেরিয়ে গিয়েছে। তাতে ৮৭১ জনের মধ্যে ১২০ জন সুযোগ পেয়েছেন। কলেজ বাছাইয়ের জন্য কাউন্সেলিংও শুরু হয়েছে। আগামী ২১ মে তার ফলাফলও প্রকাশিত হবে এবং ২২ থেকে ২৬ মে-র মধ্যে কলেজে ভর্তি হতে হবে। সিনিয়র চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়ে স্বাস্থ্য দফতরের নো-অবজ়েকশন শংসাপত্র (এনওসি) লাগে। আর সেটি পেতে গেলে ‘এসআর’ পদে যোগ দিতে হয়। তাঁদের কথায়, “নিট-এসএস উত্তীর্ণদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য দুই লক্ষ টাকা সিকিয়োরিটি ডিপোজিট করতে হয়। এবার শংসাপত্র না পেলে কলেজেও ভর্তি হতে পারবে না। তাতে ওই টাকাও যেমন নষ্ট হবে, তেমনই আগামী তিন বছর আর সুযোগ মিলবে না।” নিট-এসএসে অষ্টম স্থানাধিকারী তথা আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা মনোজিৎ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, সেখান থেকে তাঁকে ছেড়ে (রিলিজ) দেওয়া হয়েছে। আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে ‘এসআর’ পদে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেলেও তা আটকে রয়েছে। অর্থাৎ দুটির কোনওটিতেই ওই চিকিৎসক-পড়ুয়া যুক্ত নন। মনোজিৎ বলেন, “অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।”

    স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম দাবি করেছেন, পোস্টিং স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তিনি বলেন, “কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই সকলের পোস্টিংও দেওয়া হবে। এর মধ্যে অন্য কোনও জটিলতা নেই।” কিন্তু এই বিলম্ব কেন, তার উত্তর পাওয়া যায়নি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)