• উত্তরবঙ্গে মমতাকে সমস্যার কথা বলতে চায় শিল্পমহল
    আনন্দবাজার | ১৮ মে ২০২৫
  • শিল্পে সব ধরনের উৎসাহ-ছাড় (ইনসেন্টিভ) দেওয়ার সুবিধা সম্প্রতি প্রত্যাহার করেছে রাজ্য সরকার। সে সিদ্ধান্তে উত্তরবঙ্গে শিল্পস্থাপনের সম্ভাবনায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় শিল্পমহল। কাল, সোমবার শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রাজ্য সরকার আয়োজিত ‘নর্থ বেঙ্গল বিজ়নেস মিট’ শীর্ষক বৈঠকে সে কথা তুলে ধরতে চান উত্তরবঙ্গের শিল্পোদ্যোগীরা। কোন কোন বিষয় মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চান, ‘কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ়’ (সিআইআই), ‘ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স’-এর উত্তরবঙ্গ শাখার মতো বিভিন্ন বণিকসভার সদস্যেরা বৈঠক করে সে তালিকা তৈরি করেছেন।

    প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে প্রায় ৯০০ শিল্পোদ্যোগীর হাজির থাকার কথা। সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান প্রদীপ সিংহলের কথায়, ‘‘শিল্পে উৎসাহ-ছাড় তুলে দেওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়েছিলাম। শিল্পোদ্যোগীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার প্রকল্প বন্ধ হয়েছে। সে সব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে চাই।’’

    পুরাতন মালদহের নারায়ণপুর শিল্পতালুক থেকে কোচবিহারের চকচকা শিল্পকেন্দ্র, শিলিগুড়ি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট থেকে জলপাইগুড়ির রানিনগর, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি শিল্পতালুক—শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গের চা শিল্পও একাধিক সমস্যার মুখে। ‘ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স’-এর উত্তরবঙ্গের সহ-সভাপতি হর্ষ বারলিয়ার কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গে চা শিল্পকে ঠিক রাখতে রাজ্যকেই এগিয়ে আসতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চাই।’’

    বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বিমান যাতায়াতে জ্বালানির উপরে রাজ্যের কর শূন্য করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে। সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ১২.৫ শতাংশ করা হয়েছে। সে ছাড় বহাল রাখার আবেদন জানাতে চান পর্যটন-বাণিজ্যে যুক্তেরা। পর্যটন সংগঠনগুলির তরফে ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে পর্যটন অন্যতম প্রধান শিল্প। তাই সে ক্ষেত্রে উৎসাহ ছাড় পেলে ভাল হয়। তা ছাড়া, সিকিমে এ রাজ্যের গাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা রয়েছে। তাতেও রাজ্যের হস্তক্ষেপ জরুরি।’’

    দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার বক্তব্য, ‘‘শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট-রাজ বন্ধ হওয়া দরকার। শিল্পোদ্যোগী, ব্যবসায়ীদের কথা পুলিশ-প্রশাসনের শোনা দরকার। তা হয় না এখানে।’’ শুক্রবারেই তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা কমিটিতে (সমতল) জেলা চেয়ারম্যান পদে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ শাখার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জয় টিব্রেওয়ালকে। সে প্রসঙ্গ টেনে বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিল্পোদ্যোগীদের দলের চেয়ারম্যান করে কিছু হবে না। আমরা ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে উত্তরবঙ্গে নতুন শিল্প হয়নি। কিছু জমির দালাল, প্রোমোটারদের রমারমা বেড়েছে।’’ বিরোধী-অভিযোগ নস্যাৎ করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহের দাবি, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন সব সময় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৈরি। মুখ্যমন্ত্রীও সব সময় শিল্পোদ্যোগীদের সহায়তা করছেন।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)