• দুর্নীতি রুখতে আবাস থেকেই অস্ত্র নম্বর-নীতি
    আনন্দবাজার | ১৮ মে ২০২৫
  • সরকারি কোনও প্রকল্পে উপভোক্তাদের যে তথ‍্য দিতে হয়, তা যাচাই করে সংশ্লিষ্ট উপভোক্তাকে একটি ‘ইউনিক ডকুমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ (ইউডিআইএন) দেওয়ার পদ্ধতি চালু করেছে রাজ‍্য সরকার। এ বার চলতি আবাস প্রকল্প (রাজ‍্যের নাম—বাংলার বাড়ি, গ্রামীণ) থেকে তা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন।

    সরকারের নীতি, প্রকল্পে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে গেলে উপভোক্তার এই ইউডিআইএন থাকতেই হবে। সেই মতো পদক্ষেপ করার নির্দেশ পঞ্চায়েত দফতরকে দিয়েছে নবান্নের শীর্ষমহল। বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এতে বার বার নথিপ্রমাণ দেওয়ার ঝক্কি যেমন সামলাতে হবে না উপভোক্তাকে, তেমনই সরকারি প্রকল্পে টাকা বেহাত হওয়াও অনেকটা ঠেকানো যাবে।

    আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোনও একটি ক্ষেত্রে উপভোক্তা যে যে নথি দাখিল করেন সরকারি সুবিধা পেতে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাচাই হয়ে তা-ই ইউডিআইএন-এর অধীনে নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাড়তি কোনও সরকারি সুবিধার ক্ষেত্রে ইউডিআইএন থাকলেই, সংশ্লিষ্ট উপভোক্তার যাবতীয় নথি পেয়ে যাবে রাজ‍্য। আবাস প্রকল্পের পর্যালোচনায় নবান্নের নির্দেশ ছিল— ১০০ শতাংশ ইউডিআইএন কার্যকর করতেই হবে। এই নম্বর ছাড়া ওই প্রকল্পে দ্বিতীয় কিস্তির জন্য কাউকেই গ্রাহ‍্য করা হবে না।

    গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি তথ‍্য বলছে, আবাসের প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়া ১২ লক্ষ উপভোক্তার মধ্যে ১১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫০০ জনের ইউডিআইএন হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে ২৬,৫০০টি ইউডিআইএন (২.২১%) তৈরির কাজ। আধিকারিকদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট উপভোক্তারা আবাস ছাড়াও আরও কিছু সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই তাঁদের ধারণা, আবাসের হাত ধরে বাকি প্রকল্পগুলিতেও এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

    প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, যোগ‍্য উপভোক্তার কাছে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখাই জরুরি ছিল। কারণ, ১০০ দিনের কাজ, আবাস ইত্যাদি প্রকল্পে একের টাকা অন‍্যের কাছে পৌঁছনোর অভিযোগ উঠেছিল ভুরি ভুরি। ‘অযোগ্য’ অনেকেই যোগ‍্যদের বঞ্চিত করে সুবিধা পেয়েছিলেন বলে সরব ছিলেন বিরোধীরাও। এই প্রকল্পগুলিতে গত কয়েক বছর ধরে যে কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ রয়েছে, তার নেপথ্যে এটা অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। যদিও ভোট-প্রতিশ্রুতি মেনে আবাসের টাকা দেওয়া শুরু করেছে রাজ‍্য নিজেই। তবে ভবিষ্যতে কেন্দ্রের বরাদ্দ চালু হওয়ার আশা থেকে রাজ‍্যের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ।

    আবার অর্থ-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, সরকারি কোষাগারের উপরে বিপুল চাপের প্রেক্ষিতেও ইউডিআইএন-নীতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ১২ লক্ষ উপভোক্তার প্রথম কিস্তি বাবদ ৭,২০০ কোটি (মাথাপিছু ৬০ হাজার টাকার হিসেবে) টাকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তিতেও সমান অর্থ দিতে হবে। আবার তালিকাভুক্ত আরও ১৬ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে আরও প্রায় ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে রাজ্যকে। এ ছাড়াও রয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ একাধিক খরচসাপেক্ষ প্রকল্পের ভার। এই অবস্থায় একটি টাকার অপচয়ও সরকারের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এক কর্তার কথায়, “সরকারি অনুদান প্রকল্পগুলি চালাতে টাকার সংস্থান কতটা জরুরি, তা শিল্পে উৎসাহ ছাড় (ইনসেনটিভ) প্রত্যাহার থেকেই স্পষ্ট। তার সমান্তরালে ইউডিআইএন-পদ্ধতিও জরুরি ছিল।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)