সুজিত রায়, আলিপুরদুয়ার
সাত মিনিটের একটি শর্ট ফিল্ম। খুব অল্প পুঁজিতে তৈরি। খুব কম সময়ের মধ্যে ইউটিউবে সাড়া ফেলে দিয়েছে ছবিটি। বিষয় পহেলগামে জঙ্গি হামলা। ইতিমধ্যে ১৫ লক্ষ দর্শক ছবিটি দেখে ফেলেছেন আলিপুরদুয়ারের মাটিতে, সেখানকার মানুষদের নিয়ে তৈরি হওয়া ছবিটি। ইংরেজি সাবটাইটেল তৈরি করে এটিকে বিদেশে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে তৈরি হয়েছে শর্ট ফিল্ম ‘পহেলগাম টেরর অ্যাটাক’। সামরিক বাহিনীর পোশাক থেকে খেলনা বন্দুকের কেরামতিতে দর্শকের মন মজেছে। ২২ এপ্রিল পহেলগামে হামলার স্মৃতি যেন ফিরে আসছে এই ছবির প্রতি মুহূর্তে, তবে কোনও বিদ্বেষের বার্তা ছাড়া।
আলিপুরদুয়ার–২ নম্বর ব্লকের প্রত্যন্ত দু’টি গ্রামে হয়েছে শুটিং। উদয় মাহাতোর পরিচালনায় প্রধান চরিত্রে রয়েছেন রাজবংশী চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট পরিচালক দেবকুমার দাস। স্থানীয় ৩০ জন নবীন অভিনেতা–অভিনেত্রী অংশ নিয়েছেন ছবিতে। এঁদের মধ্যে ১২ জন মহিলা শিল্পী।
শামুকতলা থানার ঢালকোর ও ভাষারডাবড়ি সবুজে ঢাকা গ্রাম। পাশেই ভুটান পাহাড়। দু’টি ধাপে দু’টি গ্রামে শুটিং হয়েছে। শুটিং দেখতে হাজির হয়েছিলেন দুই গ্রামের মানুষ। এখন অবশ্য এই ছবি পৌঁছে গিয়েছে নেট দুনিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে।
ফিল্মে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন আলিপুরদুয়ার মহাবিদ্যালয়ের সাত ছাত্রী। ফিল্মে দেখা গিয়েছে কলেজের এক অধ্যাপক, তাঁর স্ত্রী ও শিশুকন্যাকেও। ছাত্রী শ্রেয়সী রায়ের বক্তব্য, ‘কোনও ছবিতে এ ভাবে অংশ নিইনি। খুবই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। তার উপরে এমন একটা ছবি যার বিষয়বস্তু একটি আলোড়ন ফেলে–দেওয়া ঘটনা।’
আলিপুরদুয়ার মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমল কর বলেন, ‘অভিনয় করে ভালো লেগেছে। পহেলগামের সেই জ্বলন্ত দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছি। প্রস্তাব দিতেই আমরা রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। আর এই ছবির বার্তার সঙ্গে সবাই একমত।’
কী বার্তা দিয়েছে ‘পহেলগাম টেরর অ্যাটাক’?
দেবকুমার বলেন, ‘বিভেদের রাজনীতি থেকে সরে এসে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোনোর বার্তা রয়েছে এই শর্ট ফিল্মে। অশুভ শক্তির আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে। সেটাকে দূর করার জন্য আমাদের এই প্রয়াস।’
‘বীর জওয়ান’ ইউটিউব চ্যানেলের তত্ত্বাবধানে এই শর্ট ফিল্ম উঠে এসেছে ইন্টারনেটে। ক্যামেরাম্যান সুনীল পুচু গোটা বিষয়টি তুলে এনেছেন একটি সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে। বলেন, ‘জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। আমরা সবাই এক, বিভেদ তৈরির অপচেষ্টা রুখতে হবে, এ কথাই বলা হয়েছে।’
এই ছবির জন্য খরচ একেবারে কম হয়নি। দেবকুমারের কথায়, ‘সাত মিনিটের শর্ট খরচ কিন্তু ৬০ হাজার। ৩০ হাজার টাকা লেগেছে মিলিটারি পোশাক ও নকল বন্দুক কিনতে। এ সব আনা হয়েছে শিলিগুড়ি থেকে। শিল্পীদের সাম্মানিক দিতে হয়নি। শুধু খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
একটি সাঁওতাল পরিবারে শুটিংয়ের টিম দুপুরের খাওয়া সেরেছে।’ পার্বতী পুচু ও লক্ষ্মী পুচুর বাড়িতে বসেছিল খাওয়াদাওয়ার আসর। খরচের জোগান প্রোডাকশন টিমের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও আয়োজন ছিল আন্তরিকতায় ভরা। অল্প ক’দিনের শুটিংয়ে সবাই মিশে গিয়েছিলেন এই গ্রাম ও গ্রামবাসীর সঙ্গে। ভালোবাসায়, আন্তরিকতায়।
ভুটান পাহাড়ের কোল থেকে এখন সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র— বিভেদ নয়, যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।