• সংসারে শ্রী ফেরে রান্নার গুণে, লড়ে যাচ্ছেন পিউ
    এই সময় | ১৮ মে ২০২৫
  • পুলক বেরা, তমলুক

    স্বামী-সন্তান নিয়ে দিব্যি দিন কাটছিল তাঁর। স্বামী বেসরকারি অ্যাড এজেন্সির কর্মী। সংসারের একমাত্র রোজগেরে তিনিই। ছেলে অভিরাজের বয়স তখন সাত বছর। মেয়ে ঐশ্রীর এগারো। তাম্রলিপ্ত পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পিউ আদকের সুখের সংসার।

    কিন্তু ২০২১ সালটা সব তছনছ করে দিল। করোনা অতিমারিতে বেসরকারি সংস্থায় শুরু হলো কর্মী ছাঁটাই। পিউয়ের স্বামী অমিতেরও চাকরি গেল। সুখের সংসারে নেমে এল অনটন। কিছু দিন কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালানোর পরে এক অন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিলেন পিউ।

    লড়াই তো করবেন! কিন্তু অস্ত্র কই?

    আচমকা তাঁর মাথায় বিদ্যুতের মতো খেলে গেল একটা আইডিয়া। অস্ত্র আছে তো! হাতা, খুন্তি আর তাঁর রান্নার হাত। বরাবরই পিউয়ের রান্নার প্রশংসা করতেন সকলে। ঠিক করলেন, সেই গুণকেই কাজে লাগাবেন। ২০২২-এর মাঝামাঝি অন্য এক জীবন শুরু করলেন পিউ। বাড়িতে রান্না করে শুরু করলেন হোম ডেলিভারি।

    প্রথম দিকে অর্ডার আসত হাতেগোনা। বছর দুয়েকের মধ্যে তা পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে। তার পরে পিউ সিদ্ধান্ত নেন, বাড়ি থেকে নয়, তিনি দোকানই খুলবেন। সব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশেই খুলে ফেলেন ‘হোটেল পঞ্চব্যঞ্জন।’

    ভাবনাটা যে ভুল ছিল না, তা প্রমাণ করে দেয় দোকানের সামনের থিকথিকে ভিড়টা। প্রতি দিন তমলুকের নানা প্রান্ত থেকে সে দোকানে ভিড় জমান মানুষ। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মেলে খাবার। মেনুতে থাকে ডাল, সব্জি, মাছ, মাংস, ডিম, চাটনি ও পাঁপড়। জন্মদিন কিংবা অন্য যে কোনও অনুষ্ঠানের খাবারের অর্ডার এলে তা-ও পৌঁছে দেন পিউ। তখন মেনুর অর্ডার অনুযায়ী তৈরি হয় খাবার।

    প্রথম দিকের লড়াইয়ের কথা মনে পড়লে আজও পিউয়ের চোখ ছলছল করে। অভাবের তাড়নায় যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন, তার সাফল্যে আজ শুধু সংসারের খরচই নয়, সন্তানদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে তাদের সমস্ত আবদার মেটাচ্ছেন তিনি-ই। তিন বছরের এই লড়াইয়ে সব সময়েই পাশে পেয়েছেন পরিবারের সবাইকে।

    কিন্তু, একটা দোকানেই থেমে যাওয়ার মানুষ নন পিউ। তাঁর স্বপ্ন, আরও বেশ কয়েকটি দোকান খুলবেন তিনি। পিউয়ের স্বামী অমিত আদক বলছেন, ‘প্রথম থেকেই ওর ইচ্ছে ছিল নিজে কিছু করার। তাই ও লক্ষ্যে স্থির থেকে আজ ব্যবসাটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। শুরু থেকেই আমি ওর পাশে থেকেছি। ভবিষ্যতেও থাকব।’

  • Link to this news (এই সময়)