নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: মৌসুমি বায়ু এখনও প্রবেশ করেনি। তার আগমন নিয়েও স্পষ্ট পূর্বাভাস দিতে পারেনি আবহাওয়া দপ্তর। কিন্তু, নিম্নচাপ অক্ষরেখার অবস্থান ও জলীয় বাষ্পের জোগানের জেরে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলে বৃষ্টি অব্যাহত। যার জেরে রবিবার দার্জিলিং পাহাড়ে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ি ও রাস্তা। আর মহানন্দা নদীর জলস্তর বাড়ায় শিলিগুড়ি শহরে নদীর পাড় বাঁধানোর কাজ থমকে গিয়েছে। এমন আবহাওয়া আগামী আরও তিন থেকে চারদিন চলবে। সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এনিয়ে সতর্ক রয়েছে মিনি সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’। ইতিমধ্যে প্রতিটি জেলাকে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এদিন ভোরে শিলিগুড়িতে জোর বৃষ্টি হয়। এরপর বৃষ্টি না হলেও দিনভর আকাশ ছিল মেঘলা। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে বৃষ্টির পরিমাণ ৬২.৬ মিলিমিটার। দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের অবস্থাও একই। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলাতেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি চলছে। এরজেরে গরমের দাপট নেই বললেই চলে। এখানকার আবহাওয়া মনোরম। এই অবস্থায় জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বর্ষা এখানে প্রবেশ করবে বলেই অনেকের ধারণা।
যদিও, সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের অধীকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, এখানে মৌসুমি বায়ুর আগমন নিয়ে এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে, উত্তরবঙ্গে বাতাসের উপরিভাগে নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তার করছে। সঙ্গে বঙ্গপোসাগর থেকে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্পের জোগান হচ্ছে। এরজেরেই আরও তিন-চারদিন বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, এদিন সকালে দার্জিলিং বৃষ্টির সময় শৈল শহর দার্জিলিংয়ের ৮নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য কাকঝোড়ায় একটি বাড়ির উপর ধসে পড়ে গাছ। এতে হতাহতের কোনও ঘটনা না ঘটলেও ওই বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেভকের কাছে কালিঝোড়ায় গাছ পড়ে দীর্ঘক্ষণ সিকিম ও কালিম্পংয়ের লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ ছিল। স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দু’টি জায়গায় গাছ কেটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
দার্জিলিং জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পাহাড়ে ধস প্রবণ প্রায় ১৫০টি জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু বাসিন্দা নিরাপদস্থানে সরে গিয়েছেন। প্রতিবেশী কালিম্পং জেলা প্রশাসনও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
পাহাড়ে বৃষ্টি হওয়ায় এদিন আচমকা মহানন্দা নদীর জলস্তর বেড়ে যায়। যারজেরে শহরের ‘সেলফি জোন’ লালমোহন মৌলিক ঘাটের কাছে পাড় বাঁধানোর কাজ থমকে গিয়েছে। সেচদপ্তর সূত্রের খবর, গত বর্ষায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় মহানন্দা নদী ছোবলে পাড় ও রাস্তায় ফাঁটল ধরে। এজন্য এক মাস আগে নদীর বা পাশে পাড়ের প্রায় ২০০ মিটার অংশ মেরামতির কাজে হাত দেওয়া হয়। এজন্য বাঁধ দিয়ে নদীর একাংশের জল শুকানো হয়। এরপর বোল্ডার, তারজালি, গাছের গুঁড়ি, বালির বস্তা দিয়ে সিড়ির মতো চারটি ধাপ তৈরির কাজ চলছে। এদিন নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় সেই কাজ স্থগিত করেছে সেচদপ্তর। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আবার পাম্প করে নদীর জল শুকিয়ে সেই কাজে হাত দেওয়া হবে। বর্ষা নামর আগেই তা শেষ করা হবে।
এর বাইরে বৃষ্টিতে হায়দরপাড়ায় একটি স্কুলের মাঠে, কিছু পার্কে, চম্পাসারিতে নির্মীয়মাণ জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকায়, গ্রামীণ এলাকার কিছু নিচু জায়গায় বৃষ্টির জল দাঁড়িয়েছে।