• ‘বর্তমান’ খবরের জের, শক্তিগড়ে ধৃত ভুয়ো ডাক্তার, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, বন্ধ জল চিকিৎসা
    বর্তমান | ১৯ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: তিনি স্বঘোষিত চিকিৎসক হয়ে উঠেছিলেন। গরম জলে ডুবিয়ে ক্যান্সার বা কিডনির রোগীদের রাতারাতি সারিয়ে তোলার ‘মন্ত্র’ পেয়েছিলেন তিনি! সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকজন ইউটিউবারের কাছে এমনই দাবি করেছিলেন। তারপর আর দেখে কে। পূর্ব মেদিনীপুর, আসানসোল, মালদহ, বনগাঁ সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাতারে কাতারে রোগী ভিড় জমান তার কাছে। প্রতিদিন তিন হাজার টাকা দর্শনী দিতে হতো। রোগ সারাতে এসে অনেকেই সর্বশ্রান্ত হয়েছিলেন। শুক্রবার ‘বর্তমান’ পত্রিকায় স্বঘোষিত ওই চিকিৎসকের কারসাজি ফাঁস হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তার বাড়িতে তৈরি হওয়া নার্সিংহোমে আধিকারিকরা অভিযান চালান। ওই ভুয়ো চিকিৎসককে পুলিস আটক করে। তার ‘নার্সিংহোম’  বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশারানি এ বলেন, মানুষের সঙ্গে যে বা যারা প্রতারণা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গরম জলে ডুবিয়ে ক্যান্সার বা কিডনির রোগীদের কখনই সুস্থ করা যায় না। ওই ব্যক্তির বাড়িতে থাকা রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি তাপস ঘোষ বলেন, এভাবে রোগ সারানো গেলে চিকিৎসাশাস্ত্রের দরকার হতো না। গরম জলে ডুবিয়ে ক্যান্সার বা কিডনির রোগ সারানোর কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। রোগীদের বিপদে ফেলা হচ্ছে।

    স্থানীয়রা বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে ওই ব্যক্তি রাতারাতি কোটিপতি হয়ে উঠেছে। তার কোনও ডাক্তারির ডিগ্রি নেই। অথচ এলাকার সবার কাছে নিজেকে চিকিৎসক বলে দাবি করে ওই ব্যক্তি। রোগীদের টাকায় গাংপুর স্টেশনের কাছে প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করেছে। রেল লাইনের ধারে থাকা এই বাড়ির সবকিছুই আধুনিক। বড় আন্ডারগ্রাউন্ডের নীচে সে ‘নার্সিংহোম’ করেছে। উপরে রোগীর পরিজনদের থাকার জন্য করা হয়েছে টাইলস বসানো ঝাঁ চকচকে ঘর। ‘ডাক্তারবাবু’র চালচলনও কর্পোরেট সংস্থার আধিকারিকদের মতই। দামি ব্র্যান্ডের জামা, জুতো এবং ঘড়ি পড়তে তিনি পছন্দ করেন। মুখে সবসময় হাসি লেগে রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, পুলিসের একাংশের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। সেই কারণেই দীর্ঘদিন ধরে সে বুক ফুলিয়ে কারবার করছিল। সে তার বাড়িতে কয়েকজনকে রোগী সাজিয়ে রেখেছিল। তারমধ্যে তার স্ত্রীও রয়েছে। তারাই ইউটিউবারদের কাছে বক্তব্য রাখত। কেউ বলতো ‘এখানে আসার পর আর ডায়ালিসিস নেওয়ার দরকার হয় না’। আবার কেউ ক্যামেরার সামনে দাবি করতো ‘এখানে আসার পরই বন্ধ্যাত্ব দূর হয়েছে’। সাজানো ব্যক্তিরা সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসিমুখে বক্তব্য রাখায় অনেকেই ওই চিকিৎসকের প্রতি ভরসা করেছিলেন। আসানসোল থেকে সেখানে আসা এক রোগী কয়েকদিন আগে বলেন, ইউটিউব দেখেই এখানে এসেছিলাম। রানিগঞ্জের একটি হাসপাতালে ডায়ালিসিস নিচ্ছিলাম। এখানে এসে চিকিৎসক সেজে থাকা ওই ব্যক্তি বলেন, ডায়ালিসিসের দরকার নেই। গরম জলে ডুবে থাকলেই রোগ সেরে যাবে। সঙ্গে কিছু পাতার রস খেতে হবে। - ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)