• কয়েক মিনিটের ঝড় লন্ডভন্ড গোটা জেলা, ভাঙল প্রায় ৩৫টি বিদ্যুতের খুঁটি, বহু বাড়ি
    বর্তমান | ১৯ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: আনুমানিক ২০ মিনিটের ঝড়! তাতেই বীরভূম জেলায় বিদ্যুৎ দপ্তরের ক্ষতি কয়েক লক্ষ টাকা। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাছ উপড়ে, গাছের ডাল ভেঙে পড়ে একাধিক জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে অনেকগুলি বাড়িও। এছাড়া জেলার নানা প্রান্তে বিদ্যুতের খুঁটিও ভেঙে পড়েছে। ঘটনায় শনিবার বিকালে ঝড় থামতেই জেলার একাধিক এলাকা প্রায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দপ্তরের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করে। রাতভর বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজ চলে। শেষ পর্যন্ত রবিবার দুপুর একটা নাগাদ ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে। এবিষয়ে জেলা বিদ্যুৎ দপ্তরের রিজিওনাল ম্যানেজার পরিমল সরকার বলেন, গাছ পড়ে জেলাজুড়ে প্রায় ৩৫টি খুঁটি ভেঙেছে। এছাড়াও বিদ্যুতের তারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। তবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯৯ শতাংশ পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে। বর্তমানে অবশিষ্ট কিছু কাজ চলছে। 

    ওইদিন বিকালে আচমকাই আকাশে মেঘের ঘনঘটা নজরে এসেছিল। বিকালেই যেন সন্ধ্যা নেমে আসে। এরপরই শুরু হয় বৃষ্টি, সঙ্গে ঝড়। মাত্র মিনিট কয়েকের ঝড়েই সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। জেলার তিন মহকুমা এলাকায় প্রায় ৩৫টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। দপ্তর সূত্রে খবর, সিউড়িতে ১২টি, বোলপুরে ১৫টি খুঁটি ও রামপুরহাটে ৮টি সহ বেশকিছু বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও খুঁটির উপর সরাসরি গাছ পড়ে ক্ষতি হয়েছে। আবার কোথাও তারের উপর গাছ কিংবা ডাল পড়ে ক্ষতি হয়েছে। ঘটনায় জেলার তিলপাড়া, আহমেদপুর, রাজনগর, নানুর, লাভপুর, কীর্ণাহার, কোটাসুর সহ বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হয়। একটানা কাজ চলায় বেশকিছু এলাকায় মাঝরাতে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে, এদিন দুপুর একটা পর্যন্ত টানা বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজ চলে। 

    মিনিট কয়েকের ঝড়ে যে শুধু বিদ্যুৎ দপ্তরের ক্ষতি হয়েছে, তা নয়। ঝড়ের দাপটে একাধিক বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিউড়ি মহকুমা এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বেশকিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর সামনে এসেছে। তিলপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার কামালপুর মুদিডাঙ্গাল সহ দুর্গাপুর, অজয়পুর, তিলপাড়া, জুকাচণ্ডীপুর এলাকায় প্রায় ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেশিরভাগটাই আংশিক ক্ষতি। যদিও কামালপুর মুদিডাঙ্গালে প্রায় ৮টি বাড়ি গাছ পড়ে যথেষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনও বাড়ির বারান্দা ভেঙে গিয়েছে। আবার কোনও বাড়ির রান্নাঘর গুঁড়িয়ে গিয়েছে। আবার একটি বাড়িতে গাছ পড়ে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি ভেঙে পড়েছে। ঘটনায় দিশেহারা ওই পরিবারগুলি। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক শেখ সাজিম বলেন, আচমকাই গাছের ডাল ভেঙে বারান্দার উপর পড়ে। তাতে ছাউনি নষ্ট হয়েছে। আমার মাথায় কিছুটা আঘাত লেগেছে। আজমিরা বিবি বলেন, ঘরের পাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি ভেঙে গিয়েছে। দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। ছাউনি ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় আমার ছেলের কাঁধে চোট লেগেছে। এই ভাঙা ঘরে রাত কাটানো এখন আমাদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় প্রধান বাসুদেব মাহারা বলেন, সবমিলিয়ে প্রায় ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিনভর আমরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছি। তাঁরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)