নেশায় আসক্তি, সিভিকের চাকরি খোয়ালেন প্রাক্তন ওসির ছেলে
বর্তমান | ১৯ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পাঁশকুড়া: বাবা ছিলেন জেলা পুলিসের সাব ইন্সপেক্টর। মা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা। পাঁশকুড়ার ওই দম্পতির ছেলে পাঁশকুড়া থানার সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন। ব্রাউন সুগারে আসক্ত হয়ে সেই চাকরি খোয়া গিয়েছে। নেশার টাকা জোগাড় করতে বাড়িতে হামান-দিস্তাও বিক্রি করে দিয়েছে ওই গুণধর। শুধুমাত্র পাঁশকুড়ার ওই সিভিক ভলান্টিয়ার নয়, শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্রাউন সুগারে আসক্ত বহু যুবকের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি-ছিনতাই করছে। শনিবার মেচগ্রাম থেকে পাঁশকুড়া স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় স্কুটিতে যাওয়া এক যুবতীকে দুষ্কৃতীরা টার্গেট করে। তাঁর সোনার হার ছিনতাই করার চেষ্টা হয়। টানাটানিতে স্কুটি থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হন। এই মুহূর্তে একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস।
জানা গিয়েছে, ওড়িশা থেকে খড়্গপুর হয়ে ব্রাউন সুগার ঢুকছে পাঁশকুড়া শহরে। শহরের কনকপুর, বনমালী কলেজ সংলগ্ন এলাকা, স্টেশন চত্বর, পীতপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল সংলগ্ন বস্তি এলাকায় সেই ব্রাউন সুগারের পুরিয়া তৈরি করে শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২০০টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে পুরিয়া। স্থানীয়ভাবে এর নাম ‘পাতা’। পাতার মধ্যে মোড়া থাকে ব্রাউন সুগার। সেই মাদক সেবন করছে বহু কিশোর ও যুবক। শিক্ষিত ও ভদ্র পরিবারের যুবকরাও তাতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অল্পবয়সে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলছে যুব সমাজ।
একসময় পাঁশকুড়া শহরে কনকপুরে তুফান নামে এক যুবক ব্রাউন সুগার সাপ্লাইয়ের মূল কারবারি ছিল। পুলিস বেশ কয়েকবার তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু, এখন তুফানের মতো অনেকেই এই পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। স্কুল থেকে কলেজছাত্ররা ব্রাউন সুগার ও গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। নেশার টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই করতে বাধ্য হচ্ছে। যেকারণে পাঁশকুড়ায় চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ক্রমশ বেড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় অসামাজিক কাজকর্ম বেড়ে গিয়েছে। এরফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পাঁশকুড়া পুরপ্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন নন্দ মিশ্র বলেন, মাদক দ্রব্যের ব্যবহার বেড়েছে। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা থেকে মাদক সামগ্রী আসছে। পুলিসের উপর এনিয়ে চাপ আছে। পুলিসও বিষয়টিতে রাশ টানতে চেষ্টা চালাচ্ছে। পাঁশকুড়া পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার তথা কংগ্রেস নেতা কল্যাণ রায় বলেন, সাধারণ মানুষকেও মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। এর বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
পাঁশকুড়া থানার আইসি সমীর দে বলেন, ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে আগেই কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছি। প্রায়ই ধরপাকড় করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কেস দেওয়া হচ্ছে। শনিবার ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত দু’জনের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।