নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: দিনভর দাদাগিরিই সার। ৫৮ আসনের মধ্যে মাত্র ২৮টিতে প্রার্থী দিয়ে দু’টিতে জিতল বিজেপি। রবিবার তমলুক কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির ভোটে বিজেপির লম্ফঝম্ফের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল তৃণমূল। এদিন শালগেছিয়া হাইস্কুলে ওই সমবায় সমিতির ভোটে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। ভোটের ফলাফল বেরতেই অবশ্য উধাও হয়ে যায় পদ্ম পার্টির নেতা-কর্মীরা। মোট ৫৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হল ৫৫টি আসনে। আর, বিজেপির প্রাপ্তি মাত্র দু’টি সিট। প্রেস্টিজ ফাইটে জিতলেন নির্দল হিসেবে লড়াই করা শহর তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক চন্দন ঘোড়াই। ভোটে জেতার পর তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের নিয়ে বিজয় মিছিল করেন তমলুক শহরের দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। ২০১৯ সালে তমলুক টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপর ছ’টি বছর নিবরাচিত বোর্ড ছাড়াই পরিচালিত হয়েছে সোসাইটি। বোর্ড না থাকায় কাজে অনেক সমস্যা হয়েছে। প্রায় একশো বছর পুরনো এই ক্রেডিট সোসাইটি তমলুক শহরের নাইট ব্যাঙ্ক হিসেবেও পরিচিত। প্রার্থী তালিকায় তমলুক শহরের প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতা লড়াই করেছিলেন। এদিন ওই নির্বাচনে পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়, ভাইস চেয়ারপার্সন লীনা মাভৈ, শহর সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া, কাউন্সিলার বিমল ভৌমিক সহ শহরের শাসক দলের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীরা সকলেই জয়ী হন। শহরের ধারিন্দ-ডহরপুর জোন থেকে দলের প্রার্থী হতে না পেরে নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন চন্দন ঘোড়াই। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার দেবশ্রী মাইত তাঁর সমর্থনে প্রচার সেরেছেন। ওই প্যানেলের তৃণমূল প্রার্থী দীপক পড়িয়াকে হারিয়ে চন্দন জয়ী হয়েছেন। বিজেপির জেলা কোষাধ্যক্ষ আনন্দ নায়েক এবং নগর মণ্ডলের সহ সভাপতি মান্তু হাইত জয়ী হয়েছেন। তাঁদের বিপক্ষে পরাজিত হয়েছেন যথাক্রমে জয়দেব মাজি ও সাধনা জানা দাস। এদিন ভোট উপলক্ষ্যে তৃণমূল ও বিজেপির পক্ষ থেকে আলাদা ক্যাম্প ছিল। দু’ দলের শহরের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে দু’ দলের নেতারা মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন। ভোট শুরু হওয়ার প্রায় আড়াই ঘণ্টা বাদে আচমকা দু’ পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি বেধে যায়। তৃণমূল নেতা চঞ্চল খাঁড়া ও বিজেপির শহর সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ বেরার ধাক্কাধাক্কিতে উত্তেজনা ছড়ায়। তাঁদের অনুগামীরা রে রে করে তেড়ে আসেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিস। বিজেপি নেতা সুরজিৎ বেরা অবশ্য ভোটে হেরে গিয়েছেন। ভোটের আগেই তৃণমূল বোর্ড পকেটে পোরায় রবিবারের ভোট গুরুত্বহীন হবে বলে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু, বিজেপির দাদাগিরি এবং তৃণমূলের মাটি কামড়ে লড়াইয়ে উত্তেজনার যথেষ্ট খোরাক ছিল। ভোটার ছিল প্রায় ১৪০০। বিকেল ৩টার পর ভোট গণনা শুরু হয়। তৃণমূলের প্রার্থীদের জয়ের খবর আসতে শুরু করতেই বিজেপির ক্যাম্প ফাঁকা হতে থাকে। সন্ধ্যার পর বিজয় মিছিল বের করে শাসক দল। তৃণমূলের শহর সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া বলেন, ৫৮টি আসনের মধ্যে আমাদের প্যানেলের ৫৫ জন জয়ী হয়েছেন। বিজেপি ঝামেলা করার চেষ্টা করেছিল। আমাদের বাধায় সেই কাজে সফল হয়নি। বিজেপি নেতা সুরজিৎ বেরা বলেন, তৃণমূল ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে বহিরাগত জড়ো করেছিল। আমি মাত্র চার ভোটে হেরেছি।
তমলুক টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির নির্বাচনে জয়ী তৃণমূল।-নিজস্ব চিত্র