যোগীরাজ্যেও নিশানায় বাংলার শ্রমিক, বাংলাদেশি সন্দেহে আটক ৫
বর্তমান | ১৯ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ওড়িশার পর উত্তরপ্রদেশ। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার চলছেই! রুজিরুটি হারিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাঁদের।
কিছুদিন আগে বেলডাঙার প্রায় ২০ জন শ্রমিককে ওড়িশা থেকে ফিরে এসেছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি। মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওড়িশায় এখন শাসন ক্ষমতায় বিজেপি। এবার এই একই অভিযোগ উঠল যোগীরাজ্যেও। বাংলাদেশি সন্দেহে উত্তরপ্রদেশের মথুরা পুলিস আটক করে মুর্শিদাবাদের পাঁচজন পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিককে। শুক্রবার রাতে খবর পেয়েই তাঁদের তড়িঘড়ি উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিস। দু’জনের বাড়ি ইসলামপুর থানা এলাকায়। বাকি তিনজন ভগবানগোলার বাসিন্দা। উত্তরপ্রদেশে পাইপ লাইনের কাজ করতে গিয়েছিলেন এই পাঁচ শ্রমিক। গত ক’দিন ধরেই তাঁদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ। গত শনিবার বিকেলে কাজের পর তাঁরা স্থানীয় একটি পার্কে বিশ্রাম করছিলেন। সেই সময় পুলিস তাঁদের আটক করে। নিজেদের পরিচয়পত্র দেখালেও যোগী আদিত্যনাথের পুলিসের হাতে পার পাননি কেউই। বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করে থানায় তুলে নিয়ে যায়।
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে নুর ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, গোলাম রসূল, রায়হান শেখ ও সোহেল রানারা উত্তরপ্রদেশে কাজে যান। শুক্রবার মথুরার গোবিন্দনগর থানা এলাকায় একটি পার্কে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ক্লান্ত-অবসন্ন ওই পাঁচ শ্রমিক। তখনই বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিস আটক করে। রেহাই পেতে ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র দেখান। কিন্তু ছাড়া হয়নি। ওই খবর তাঁরা বাড়িতে জানান। পরিবারের লোকজন ইসলামপুর থানার দ্বারস্থ হন। থানার তরফে সেখানকার পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই সময় মথুরা পুলিসের তরফে কিছু তথ্য যাচাই করতে ইসলামপুর থানার সাহায্য নেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই ইসলামপুর পুলিস ওই পাঁচ শ্রমিকের সব পরিচয়পত্র ভেরিফাই করে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয়। পাশপাশি জেলা পুলিস সুপার খবর পেয়েই উত্তরপ্রদেশের পুলিস-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গভীর রাতে তাঁদের থানা থেকে ছাড়া হয়। মুর্শিদাবাদের পুলিস সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, ‘আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের ওখানে আটক করা হয়েছিল। ওদের ডকুমেন্টস আমরা ভেরিফাই করে সঙ্গে সঙ্গে ওখানকার পুলিস আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা ছাড়াতে পেরেছি। পাঁচজন যুবকের পরিবারের সদস্যরা খুশি। আমরা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। এবার থেকে যদি কেউ কোথাও গিয়ে সমস্যায় পড়েন তাঁদেরকেও দ্রুত সহযোগিতা করার জন্য ব্যবস্থা করছি।’
ইসলামপুরের পরিযায়ী শ্রমিক নূর ইসলামের দাদা টিটন শেখ বলেন, ‘বাড়িতে হঠাৎ ফোন আসে ভাইয়ের। বলা হয়, পুলিস এসে ওদের আটক করেছে। সবাইকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করছে। আমরা সকলে মিলে ইসলামপুর থানায় এসেছি। আমার ভাইরা ওখানে পাইপলাইনের কাজ করত। পুলিসের সহযোগিতায় ওদেরকে দ্রুত ছেড়ে দিয়েছে।
ইসলামপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, ওঁরা আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড আমাদের পাঠান। সেগুলি ভেরিফিকেশন করে পুলিস সুপারকে জানাই। রিপোর্ট যওয়ার পর ওঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।