বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি থাকা যাবে না, বনদপ্তরের নয়া বিধিতে ক্ষোভ
বর্তমান | ১৯ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: এবার থেকে বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে নিজের ইচ্ছেমতো ঘোরা যাবে না। বনদপ্তরের নতুন নিয়ম, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দলবদ্ধভাবে ঘুরতে হবে পর্যটকদের। নির্দিষ্ট সময় পর তাঁদের বেরিয়ে আসতে হবে। একদল বেরিয়ে এলে তবেই আর একদল অভয়ারণ্যে ঢুকতে পারবে। বনদপ্তরের নির্ধারিত রাস্তা ধরেই পর্যটকদের ঘুরতে হবে। এই নয়া নিয়ম নিয়ে ক্ষুব্ধ পর্যটকরা। তাঁদের অভিযোগ, নতুন নিয়মে জঙ্গল ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। প্রবেশদ্বার থেকে কয়েকশো মিটার ভিতরে ঘুরিয়েই বাইরে বের করে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। অন্যদিকে বনদপ্তরের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রবেশ মূল্য তুলে দেওয়ার ফলে পর্যটকের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতেই নতুন ব্যবস্থা চালুল করা হয়েছে।
নদীয়া জেলার নাকাশিপাড়া ব্লকে অবস্থিত বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য। যেখানে ঘন জঙ্গলে অবাধে জীবজন্তুদের ঘুরতে দেখা যায়। কয়েক শতাধিক হরিণ রয়েছে এই অভয়ারণ্যে। এছাড়াও অজগর সাপ, নানা রকমের পাখি, ঘরিয়াল সহ বিভিন্ন পশুপাখির দেখা মেলে। প্রতিবছর বহু পর্যটক এই অভয়ারণ্যে আসেন। ছুটির ও উৎসবের দিনগুলোতে ভিড় উপচে পড়ে। পর্যটকদের কথায়, বেথুয়াডহরি এলে ছোটখাটো সাফারির অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। তবে নয়া নিয়মে সেই ‘সাফারি’র সুযোগ ফিকে হয়ে এসেছে।
বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে এতদিন টিকিট কেটে তবে ঢুকতে পারতেন পর্যটকরা। তবে ঘোরার কোনও ধরাবাধা সময় ছিল না। পর্যটকরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো সময়ে এসে টিকিট কেটে অভয়ারণ্যের ভিতরে ঢুকে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটাতে পারতেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অভয়ারণ্যে প্রবেশ মূল্য তুলে দিয়েছেন। তারপর থেকেই বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্যে পর্যটকের সঙ্গে এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। যার জন্য কিছু বিধিনিষেধ লাগু করা হয়েছে।
এখন পর্যটকরা চাইলেই অভয়ারণ্যের ভিতরে ঢুকতে পারবেন না। যতক্ষণ না আগের পর্যটকদের দল বাইরে আসছেন। পর্যটকদের দাবি, প্রত্যেকটি দলকে এক ঘণ্টা করে ঘোরার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কিছু অংশ ঘুরিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে তাদের। এতে অনেক পর্যটকরা সন্তুষ্ট নন। বিশেষ করে পরিবেশপ্রেমীরা অসন্তুষ্ট এই সিদ্ধান্তে। তবে বনদপ্তরের দাবি, আগে যতটুকু এলাকা পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারতেন এখনও ততটাই পর্যটকদের ঘোরানো হচ্ছে।
পর্যটক শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী বলেন, কংক্রিটের দেওয়াল ছেড়ে পরিবেশের কাছাকাছি পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয় নদীয়ার বেথুয়াডহরি অভয়ারণ্য। কিন্তু এখন এসে জানতে পারি দল বেঁধে ভিতরে ঢোকানো হচ্ছে। পাঁচশো মিটার পর্যন্ত ঘুরিয়েই আবার বেরিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। কেউ যদি আস্তে একটু দেরি করে তাঁকে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যতক্ষণ না পুরনো দল বাইরে বেরিয়ে আসছে।
বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, সম্প্রতি ঈদের দিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার পর্যটক এসেছিলেন। যা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি। ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট করার জন্যই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। কারণ, আগে দেখা যেত অনেকেই দীর্ঘক্ষণ ভিতরে ঘুরছেন। এবার পর্যটক বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেউ দীর্ঘক্ষণ ভিতরে থাকলে সমস্যা হচ্ছে। তাই দল করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘোরানো হচ্ছে।