• হেরোইন বিক্রির ‘ডিল’, স্ত্রীদের নামাচ্ছে স্বামীরা
    বর্তমান | ১৯ মে ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: স্বামী সামলাচ্ছে প্রস্তুতি, স্ত্রী করছে বিক্রি! নদীয়া জেলার কালীগঞ্জ ও পলাশীপাড়া এলাকার হেরোইন কারবারে এমনই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। হেরোইনের খদ্দের পার্টিদের সঙ্গে ‘ডিল’ করতে স্ত্রীদের এগিয়ে দিচ্ছে স্বামীরা। অনেকসময় স্ত্রীরাই আবার সরাসরি আর্থিক লেনদেন করছে। পুলিসের ধরপাকড় এড়াতে সেইসময় বাড়িতে থাকছে না স্বামীরা। তাই মনে করা হচ্ছে, পুলিসকে ফাঁকি দিতেই বাড়ির গৃহবধূদের ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক কারবারিরা। আবার অনেক সময় মাদক মামলায় স্বামীরা জেলে গেলে, হেরোইন ব্যবসা সামলাতো তাদের স্ত্রীরা। এইভাবেই সংগঠিতভাবে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে একাধিক পরিবারভিত্তিক চক্র।

    হেরোইন ব্যবসার সামনের সারিতে গৃহবধূদের এগিয়ে আসায় উদ্বেগ বেড়েছে পুলিস মহলেও। পুরুষ কারবারিদের সহজেই ধরা গেলেও, মহিলাদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিসকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। সম্প্রতি বেশকিছু থানা এলাকা থেকে একাধিক গৃহবধূ গ্রেপ্তার হয়েছে।‌ সপ্তাহখানেক আগে কালীগঞ্জ থানার মীরা ফাঁড়ির অন্তর্গত হাটগোবিন্দপুর এলাকায় হেরোইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক বধূকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে পুলিস। ধৃতের নাম ফুলমালা খাতুন। তার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৫৩৭গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফুলমালার স্বামী হেরোইন তৈরির কাঁচামাল জোগাড় করে ব্যবসা পাতে। আর ফুলমালা সামলাতো পুরো বিক্রির দায়িত্ব। খদ্দেরদের সঙ্গে যোগাযোগ, দরদাম করা থেকে সরবরাহ, সবকিছু ফুলমালাই করত। সম্প্রতি পলাশীপাড়া থানার পুলিস আসাদুল শেখ নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে। তার থেকে প্রায় তিন কিলোগ্রাম হেরোইন উদ্ধার হয়েছিল। এর আগে ধৃতের মা-ও মাদক মামলায় জেলা খেটেছে। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার(গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, মাদক মামলায় গৃহবধূরা জড়িয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে। বেশ কয়েকজন গৃহবধূ গ্রেপ্তারও হয়েছে। স্বামী মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হলে, তার স্ত্রী ব্যবসা শুরু করছে। এনিয়ে আমরা লাগাতার সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা এক সপ্তাহ ধরে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালাচ্ছি। উল্লেখ্য, নদীয়ার কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অন্তর্গত পলাশীপাড়া থানার বড় নলদহ এলাকা হেরোইন কারবারের কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও, কালীগঞ্জ থানার হাটগোবিন্দপুর এলাকাতেও এই মাদক শিল্প সম্প্রসারিত হতে দেখা যাচ্ছে। বাইরে থেকে হেরোইন তৈরির কাঁচামাল আনানো হয়‌। তারপর তা তৈরি করে পাচার করে দেওয়া হয়।‌ পুলিসের তরফ থেকেও মাদকচক্র ভাঙার জন্য লাগাতার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এখন এই ব্যবসার সঙ্গে গৃহবধূদের যুক্ত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চোখের সামনে হেরোইন ব্যবসা দেখেছে গৃহবধূরা। যার ফলে তারাও এই কাজে পটু হয়ে উঠছে। কখন খদ্দেরকে মাল বিক্রি করতে হবে, কত দামে তা বিক্রি করতে হবে, সবকিছুই নখদর্পণে গৃহবধূদের।

    গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রাতের দিকে পুলিস অভিযান চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কারবারির বাড়ি। কিন্তু অনেক সময় সেখানে গিয়ে দেখা যাচ্ছে স্বামী বা মূল কারবারি আগেভাগেই গা-ঢাকা দিয়েছে। বাড়িতে থাকছে গৃহবধূরা। এবার নিয়ম অনুযায়ী তাদের ধরতে গেলে মহিলা পুলিস উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু তা সবসময় সম্ভব হয় না। যার ফলে মাদক বিরোধী অভিযান অনেক সময় কার্যকর হয় না। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে চক্রটি পরিকল্পিতভাবে মহিলাদের ব্যবহার করছে হেরোইন ব্যবসায়।
  • Link to this news (বর্তমান)