নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বাঁকুড়া সেচদপ্তর। কংসাবতী সেচদপ্তরের কর্মী-আধিকারিকরা অফিসের অন্দরে ঠিকদারদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে বাধ্য হয়ে সেচদপ্তরের কেন্দুয়াডিহির হেড অফিসে বোর্ড লাগিয়ে ঠিকদারদের সতর্ক করা হয়েছে। বোর্ডে লেখা, ‘ঠিকাদারদিগকে অনুরোধ করা যাইতেছে যে, নিজ প্রয়োজন ব্যতিত অযথা অফিসের অভ্যন্তরে অবস্থান করিবেন না। নির্দেশানুসারে কর্তৃপক্ষ’। ঠিক কবে ওই বোর্ড লাগানো হয়েছে, সেব্যাপারে আধিকারিকরা খোলসা করে কিছু বলতে চাননি। তবে অফিসে ঠিকাদারদের ‘আড্ডা’ দেওয়া বন্ধ করতেই ওই বোর্ড লাগানো হয়েছে বলে সেচদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। সরকারি দপ্তরে এভাবে ঠিকাদারদের উদ্দেশ্যে বোর্ড লাগানো নজিরবিহীন বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। ফলে বিষয়টি সামনে আসতেই বাঁকুড়ার প্রশাসনিক মহলে ওই বোর্ড নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।
বাঁকুড়া সেচদপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস পাত্রকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তবে, সেচ দপ্তরের অন্য এক অফিসার বলেন, ঠিকাদারদের সতর্ক করে ওই বোর্ড টাঙানো হয়েছে। এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা বুঝে নিন। আমার পক্ষে এর বেশি খোলসা করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের এক কর্মী বলেন, মে-জুন মাসে আমাদের দপ্তরে ঠিকাদারদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি হয়। কাজ পাওয়ার জন্য অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অফিসের মধ্যে বসে থাকেন। কর্মীদের সঙ্গে তাঁরা গল্পগুজব করেন। বর্ষার মুখে নদীর পাড় বাঁধানো ও ভাঙন রোধের কাজ সবচেয়ে বেশি হয়। ওই ধরনের কাজ করার ‘মজা’ আলাদা। কারণ বেশি ফাঁকি মারা যায়। স্থানীয়দের তরফে এনিয়ে অভিযোগ জমা পড়ার পর তদন্ত শুরু হতে হতে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে যায়। ততদিনে জলের তোড়ে বালির বস্তা, পাড়ের মাটি ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায়। তখন মাপজোক করেও আসল কাজের হিসেব পাওয়া যায় না। ফলে ওই ধরনের কাজ করতে ঠিকাদারদের মধ্যে উৎসাহ বেশি থাকে। তাছাড়া জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে কাজের বিলও দ্রুততার সঙ্গে সরকার মিটিয়ে দিয়ে থাকে। আমরা ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।
পূর্ব ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাটির বাঁধ হল বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর। কংসাবতী নদীর উপর ওই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কংসাবতী ছাড়াও এজেলায় গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, শালি সহ অন্যান্য নদনদী রয়েছে। জেলার উত্তর দিক বরাবর বয়ে গিয়েছে দামোদর। ফলে বাঁকুড়ায় সেচদপ্তরের গুরুত্ব রয়েছে। সারাবছরই দপ্তরের তরফে ছোটবড় নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওইসব প্রকল্প ঠিকাদারদের মাধ্যমে রূপায়ণ করা হয়। অভিযোগ, ঠিকাদারদের সঙ্গে কর্মী-আধিকারিকদের একাংশের ‘গোপন বোঝাপড়া’ রয়েছে। কাজ পাওয়া থেকে দ্রুত বিল মেটানো, সবকিছুতেই ওই বোঝাপড়া কাজে লাগে বলে দপ্তরে কান পাতলেই শোনা যায়। কর্তাদের ‘সন্তুষ্ট’ না করতে পারলে কাজ পাওয়া মুশকিল হয়। সেই কারণেই ঠিকাদাররা দপ্তরের অনাচেকানাচে ঘুরে বেড়ান। তবে কর্মী-আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বসে ঠিকাদারদের খোসগল্প করার বিষয়টি দৃষ্টিকটূ হয়ে উঠেছিল। দিনদিন সেই প্রবণতা বাড়তে থাকার কারণেই সেচদপ্তর বাধ্য হয়ে বোর্ড টাঙিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। -নিজস্ব চিত্র