• পাতকুয়োই ভরসা, বানুপুরের দিকে নজরই নেই প্রশাসনের
    বর্তমান | ১৯ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: পান করার জন্য জল নিতে হতো পাতকুয়ো থেকে। আর স্নান-ইত্যাদি কাজের জন্য পুকুর ভরসা। কিংবা ২০০ মিটার দূরে যেতে হতো বালতি হাতে। সেখানে একটি টাইম কল আছে। এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না এখানকার ৮০টি পরিবারের কাছে। ২০২৫ সালে পশ্চিবাংলায় দাঁড়িয়ে এ তথ্য শুনলে আশ্চর্য লাগে। তবে অবাক লাগলেও ঘটনাটি সত্যি।

    সাঁকরাইল ব্লকের বানুপুর দু’নম্বর পঞ্চায়েতের রাজগঞ্জ। সেখানে শীতলাতলা মোড় থেকে সামান্য এগলেই সত্যেন বোস রোড। বসবাস প্রায় ৮০টি পরিবারের। বাসিন্দাদের প্রায় সবাই নিম্নবিত্ত। রোজগার দারিদ্রসীমার নীচে। ‘ব্রিটিশ আমলের পর দেশ স্বাধীন হয়েছে। রাজ্যে একাধিক সরকার তৈরি হয়েছে। তবুও পানীয় জলের সামান্য সংযোগটুকু জোটেনি আমাদের’-ক্ষোভ-দুঃখ-যন্ত্রণা নিয়ে কথাগুলি বললেন রাজগঞ্জের কয়েকজন বাসিন্দা।

    গরম একটু বাড়লেই জলের হাহাকার ওঠে গ্রামে। প্রশাসন দেখেও দেখে না। বাসিন্দারা শেষমেশ ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করেন। এবং ম্যাজিকের মতো কাজ। মিলল সুরাহা। জানানোর তিন মাসের মধ্যে বাড়ি বাড়ি পৌঁছল পানীয় জল। রাজগঞ্জের বাসিন্দারা জানান, পাড়ার মোড়ে পঞ্চায়েতের বসানো নলকূপ রয়েছে। তবে সারাবছর জল পাওয়া যায় না। এছাড়া আশপাশে বেশ কিছু সাবমার্সিবল পাম্প চলে। সে কারণে এলাকার জলস্তর নেমে গিয়েছে। ফলে এখন বাধ্য হয়ে প্রায় ২০০ মিটার দূর থেকে টাইম কল থেকে জল ভরে নিয়ে আসতে হয়। বড় ভরসা পাতকুয়ো কিংবা পুকুরের জল। পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় দরবার করে চলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু কাজ হয় না। এ কথা স্বীকার করে নিয়েছে পঞ্চায়েত সদস্যও। তপন দাস নামে ওই সদস্য বলেন, ‘বছরের পর বছর এখানকার বাসিন্দারা জল নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের দাবি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি আমিও। অবশেষে দিদিকে বলো হেল্পলাইনে ফোন করার কথা মাথায় আসে।’ 

    গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে তপনবাবু ফেব্রুয়ারি মাসে দিদিকে বলো’তে ফোন করেন। তার পরপরই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এলাকা পরিদর্শনে আসেন আধিকারিকরা। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। জানা গিয়েছে, তারপর মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কেএমডিএ’কে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূল রাস্তায় থাকা বোরিং লাইন থেকে সংযোগ টেনে এলাকার প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় পাইপ। এবং চলতি সপ্তাহ থেকেই ঘরে ঘরে টাইমকলের জল আসতে শুরু করেছে। ভীষণ খুশি বাসিন্দারা। ফকির ঘোষ নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘১৯৭২ সাল নাগাদ বাবা বাড়ি করেছিলেন। তখন থেকেই জলের সমস্যা। মুখ্যমন্ত্রীর কারণে জলকষ্ট মিটতে চলেছে।’ 

    মহিলারা বলেন, ‘গরমকালে পুকুরের জল শুকিয়ে যায়। পাতকুয়ো কিংবা নলকূপ থেকেও জল পাওয়া যায় না। খুব কষ্ট আমাদের। দিদিকে অনেক ধন্যবাদ।’ বর্তমানে দিনে তিনবেলা করে মোট পাঁচ ঘণ্টা পরিশ্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন বলে জানালেন বাসিন্দারা।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)