এই সময়: কলকাতা, বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতার ফুসফুস বলে পরিচিত রবীন্দ্র সরোবরের জলে ক্রমেই বাড়ছে ভারী ধাতুর উপস্থিতি। যা ক্ষতি করছে জলজ প্রাণীদের। দস্তা বা জ়িঙ্ক, ম্যাগনেশিয়ামের মতো ধাতুর উপস্থিতির কারণে ওখানে মাঝেমধ্যেই মাছ মরে জলে ভেসে উঠছে— এমনটাই উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায়।
এর কারণ হিসেবে প্রায় তিন দশক ধরে সরোবরের পলি তোলার কাজ না–হওয়াকেই দুষছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের অনেকে। জলের মান আপাতত সন্তোষজনক হলেও পলি তোলার কাজ দ্রুত শুরু করা না–গেলে সমস্যা আরও বাড়বে বলে পর্ষদের ওই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে।
প্রায় ১৯২ একর এলাকা জুড়ে থাকা রবীন্দ্র সরোবরের ৭৩ একর জল আর বাকি অংশের বেশির ভাগে সবুজ গাছপালা। ২০০৩ সালে জাতীয় সরোবরের মর্যাদা পায় রবীন্দ্র সরোবর। যেখানে রয়েছে এক ডজনেরও বেশি প্রজাতির জলজ প্রাণী, সাতটি প্রজাতির কচ্ছপ।
পরিবেশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা কেএমডিএ সরোবরের পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই উদাসীন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক কৌশিক প্রামাণিকের বক্তব্য, ‘দীর্ঘদিন ধরে জলাশয়ের পলি না–তুললে ক্ষতিকর ধাতুর উপস্থিতি বেড়ে যায়। এটা বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এই ধরনের ধাতুর জন্য জলজ প্রাণীদের স্নায়ুর সমস্যা, কিডনির সমস্যা হতে পারে।’
দীর্ঘদিন ধরে পলি না–তোলার ফলে জলাশয়ে দ্রবীভূত অক্সিজেনেরও ঘাটতি দেখা যায় বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘জলাশয়ে জ়িঙ্ক, ম্যাগনেশিয়ামের মতো ধাতুর উপস্থিতি মাছ, শামুক–সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। জলজ প্রাণীদের হজমের ক্ষমতাকেও নষ্ট করতে পারে এই সব ধাতু।’
কেএমডিএ সূত্রেও জানা যাচ্ছে, সরোবরের কেবল পাড় ঘেঁষা কিছু অংশে বার কয়েক পলি তোলা হলেও গোটা জলাশয়ে পুরোদস্তুর ড্রেজিং হয়নি। তার ফলেই শেওলা, পচে যাওয়া পাতা এবং প্লাস্টিক জমে গিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে জলের দূষণ আরও বাড়ছে বলে দাবি পরিবেশকর্মী সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষের।
তাঁর অভিযোগ, ‘জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরেও সরোবরের জলে প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ হয়নি। পলিও তোলা হয়নি বহু বছর। ফলে, যা হওয়ার, সেটাই হচ্ছে।’ গত এক বছরে অন্তত পাঁচ বার সরোবরের জলাশয়ে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
কেএমডিএ–র এক কর্তার বক্তব্য, ‘রবীন্দ্র সরোবর নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শ মেনেই যা পদক্ষেপ করার, সেটা করা হবে।’