অয়ন ঘোষাল: মে মাস শেষ হতেই ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তবে বঙ্গোপসাগরে নয়, এই ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কাটা মূলত তৈরি হচ্ছে আরব সাগরে। যদিও ভারতের মৌসম ভবন আরব সাগরে নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনার কথা জানালেও এখনও পর্যন্ত তা থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরির কোনও আগাম পূর্বাভাস দেয়নি।
ঘূর্ণাবর্ত
গুজরাত-সংলগ্ন আরব সাগরে তৈরি হয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। আগামী ২১ মে বুধবার আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে আরব সাগরে। পূর্ব মধ্য আরব সাগর ও কর্ণাটক উপকূলে এই ঘূর্ণাবর্ত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিম্নচাপে পরিণত হবে। অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার শক্তি সঞ্চয় করে এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। প্রাথমিকভাবে এটি উত্তর দিকে এগোবে এবং ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা। এটি ক্রমশ আরব সাগরে শক্তি সঞ্চয় করে বারবার দিক পরিবর্তন করবে। মহারাষ্ট্র উপকূল পেরিয়ে এটি গুজরাত উপকূলের স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। ২৮ মে থেকে ৩০ মে-র মধ্যে এটির স্থলভাগে প্রবেশের প্রবল সম্ভবনা।
'শক্তি'?
ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে 'শক্তি'। নামটি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। যার অর্থ-- ক্ষমতা। মে মাসের শেষের দিকে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার প্রবণতা থাকে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে। বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে যেটি দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে আছে। অর্থাৎ, শক্তিশালী হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে আগামী ছয় দিনে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। বঙ্গোপসাগরে মে মাসের শেষ সপ্তাহে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে পারে, যা নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আন্দামান সাগর-সংলগ্ন এলাকায় এই ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলেও তা ক্রমশ মধ্য ও উত্তর বঙ্গোপসাগরের দিকে এগিয়ে আসবে।
দক্ষিণবঙ্গ
সোম ও মঙ্গলবারেও দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি এবং ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো বাতাস বইবার পূর্বাভাস। ঝড়বৃষ্টির বেশি সম্ভাবনা থাকবে বীরভূম মুর্শিদাবাদ নদীয়া পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়া পুরুলিয়া ঝাড়গ্রাম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। বুধ এবং বৃহস্পতিবারে ও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায়। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো বাতাসে বইতে পারে বিভিন্ন জেলায়। ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলায়।
উত্তরবঙ্গ
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় আজ ভারী বর্ষণের আশঙ্কা। ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বিক্ষিপ্তভাবে এই জেলার দু এক জায়গায়। এছাড়াও কালবৈশাখীর মতো পরিস্থিতি তৈরির সম্ভাবনা। ৬০-৭০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। দার্জিলিং থেকে মালদা-- সব জেলাতেই বৃষ্টি এবং দমকা ঝোড়ো বাতাস, ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে বইতে পারে। বুধবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকবে জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার কোচবিহার জেলায়। মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা কম।
মৌসুমি বায়ু
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মতই ভারতের মূল ভূখণ্ড কেরালায় আগাম বর্ষা আসবে বলে অনুমান আবহাওয়া দফতরের। ২৬ অথবা ২৭ মে কেরালায় বর্ষা প্রবেশ করার পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের। ভারতের মৌসম ভবনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সাধারণত ১ জুন বর্ষা আসে কেরালায়। বর্ষা ইতিমধ্যেই আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পেরিয়ে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরের বেশিরভাগ অংশে বিস্তৃত। আগামী তিন চার দিনে মধ্য বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরের কিছু অংশে ঢুকে পড়বে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।
কলকাতা
আংশিক মেঘলা আকাশ। দিনের বিভিন্ন সময়ে সম্পূর্ণ মেঘলা আকাশ। দিনের বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিতভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিও। বৃষ্টির আগে-পরে জলীয় বাষ্পের অস্বস্তি বাড়বে। দিনের তাপমাত্রা গতকালের তুলনায় ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বাড়তে পারে।
পরিসংখ্যান
রবিবার রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য কমে ২৬.৪ ডিগ্রি। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ৪ ডিগ্রি কমে ৩১.৯ ডিগ্রি। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৬৪ থেকে ৯২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৭ মিলিমিটার। গত ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার।