দুর্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছিল গরম। এখন তা বেড়ে মোটামুটি ৪০ ডিগ্রির ধারেকাছে ঘোরাফেরা করছে। শুকিয়ে গিয়েছে নদী, জলাশয়, পুকুর, কুঁয়ো। ভূগর্ভস্থ জলস্তরও নেমে গিয়েছে। যথারীতি জেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। ধীরে ধীরে বাড়ছে ক্ষোভ।
জেলার অনেক এলাকায় এখনও পর্যন্ত নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় দল পৌঁছয়নি। অনেক জায়গায় আবার দীর্ঘদিন আগে কল বসানো হলেও তা দিয়ে জল পড়ে না। পানীয় জলের দাবিতে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভও দেখাতে শুরু করেছেন। কিন্তু ছবি তো বদলায় না!
শুক্রবারই বাঁকুড়া–১ ব্লকের আঁচুড়ির মানুষ প্রশাসনের উদাসীনতা নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই গ্রামে কয়েকশো পরিবারের বাস। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পানীয় জল সরবরাহের জন্য কয়েক বছর আগে পাইপ লাইন বসানো হয়েছিল। বাড়ি–বাড়ি তার সংযোগও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জল তো আসে না। কখনও–সখনও জলের ট্যাঙ্ক আসে সেই ঘাটতি মেটাতে, কিন্তু তা–ও পর্যাপ্ত নয়।
এই অবস্থায় পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। বাঁকুড়া সদর ও খাতড়া মহকুমার ব্লকগুলির বিভিন্ন গ্রামে ট্যাঙ্কারে করে পাঠানো হচ্ছে পানীয় জল।
এমনই শোচনীয় পরিস্থিতিতে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের দাবিতে এ দিন হাঁড়ি-কলসি-বালতি নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন গ্রামবাসীরা। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করে শুরু হয় বিক্ষোভ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। যান জনস্বাস্থ্য দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার। মৌখিক আশ্বাস দিয়ে তিনি কোনওক্রমে অবরোধ তোলেন।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, ‘সেই কত দিন আগে বাড়িতে কল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু জল তো নেই। এখানে টিউবওয়েলও অকেজো হয়ে গিয়েছে। পানীয় জলের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। গ্রামে ট্যাঙ্ক এলেও পর্যাপ্ত জল পাচ্ছি না।
এমনটা আর কত দিন চলবে?’ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ঋতম ভট্টাচার্য বলছেন, ‘এক মাসের মধ্যে ওই গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় ট্যাপ কানেকশনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। এই মুহূর্তে যে জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হচ্ছে, তার সংখ্যাও বাড়ানো হবে।’
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বাঁকুড়া সদর মহকুমা ও খাতড়া মহকুমার বাঁকুড়া ১-নম্বর, বাঁকুড়া ২ নম্বর, বড়জোড়া, ওন্দা, শালতোড়া, ছাতনা, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, ইন্দপুর, খাতড়া, তালডাংরা, সারেঙ্গা, সিমলাপাল, রাইপুর, রানিবাঁধ ও হিড়বাঁধ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে নিয়মিত পানীয় জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হচ্ছে। কোথাও মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে, আবার কোথাও এপ্রিলের শুরু থেকে এই জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, প্রত্যেক বছরেই পানীয় জলের ভয়ঙ্কর সঙ্কটের পরেও কেন প্রশাসন স্থায়ী কোনও সমাধানের পথে না–হেঁটে সাময়িক কিছু ব্যবস্থার উপরে বেশি ভরসা রাখছে?
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, ‘পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে নিয়মিত ভাবে বিভিন্ন এলাকায় ট্যাঙ্কার পাঠাচ্ছি।’ যোগ করেন, ‘জল জীবন মিশন প্রকল্পের কাজ চলছে। যে সমস্ত এলাকায় বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেখানে যত দ্রুত সম্ভব, জল দেওয়ার চেষ্টা করব। যে সমস্ত এলাকায় এখনও বাড়ি বাড়ি সেই সংযোগ দেওয়া হয়নি, তার কাজও আগামী দু–এক বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি।’
অর্থাৎ, পানীয় জলের সঙ্কট কাটানোর সমাধান এখনও মেলেনি। আদৌ কি তা মিটবে? উত্তরটা এখনও অজানা।