পুলক বেরা, তমলুক
গভীর রাত। শুনশান জাতীয় সড়ক। আচমকা সেল্ফ-স্টার্টে একসঙ্গে গর্জে উঠল বেশ কয়েকটি বাইক। তারপরে তিরবেগে ছুটল একের পর এক বাইক। এই ‘রেসের’ আগে অবশ্য একদফা বাজি হয়ে গিয়েছে। সে বাজির অঙ্ক একশো থেকে এক হাজার। কখনও বিয়ার-বিরিয়ানি। তারপরে? জো জিতেগা ওহি সিকন্দর!
মাঝরাতের বাইক বাহিনীর এই তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তমলুকের লোকজন। ওই বিকট আওয়াজে কারও ঘুম ভেঙে যেত। কেউ রাতবিরেতে পথে বেরোতে ভয় পেতেন। আর অভিভাবকেরা উদ্বেগে থাকতেন।
পুলিশও নানা ভাবে বুঝিয়েছিল। কিন্তু নিট ফল শূন্য। স্টান্টবাজি আর নিজেদের ‘স্কিল’ নিয়ে বাজি ধরার বিরাম ছিল না। তবে, সম্প্রতি পুলিশ-প্রশাসন কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরে চেনা ছবিটা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে।
মেদিনীপুরের জাতীয় সড়কে রাত নামলেই বাইকারদের রেসিং, স্টান্ট ও নানা ঝুঁকির কসরত ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। তার জেরে প্রাণও গিয়েছে বেশ কয়েকজনের। সামনের চাকা তুলে বাইক চালানো, হঠাৎ ডিস্ক-ব্রেকে চাপ দিয়ে বাইক দাঁড় করানো, রাস্তা জুড়ে এঁকেবেঁকে ছুটে যাওয়ার মতো বিপজ্জনক কার্যকলাপে অতিষ্ঠ ছিলেন সাধারণ নিরীহ মানুষ। রাতকে আরও রোমাঞ্চকর ও রোমহর্ষক করে তুলতে বাজি ধরে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনোর প্রতিযোগিতাও চলত বাইকারদের মধ্যে।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক মাস আগে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে বাইকারদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, স্টান্টবাজি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। স্টান্টবাজ বাইকারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্যকে নির্দেশ দেন।
প্রয়োজনে তাঁদের লাইসেন্স বাতিল ও মোটরসাইকেল সিজ় করার নির্দেশও দেন তিনি। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকেও তিনি অনুরোধ করেন, ‘এমন বাইকারদের ছবি বা ভিডিয়ো পাঠালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বার কাজ হয় ম্যাজিকের মতো। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ে পুলিশি নজরদারি ও ধরপাকড়। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে পৌঁছে যায় বেপরোয়া বাইক চালকদের ছবি ও ভিডিয়ো। তারপরেই কমতে শুরু করে বাইকারদের দাপট। তমলুকের বাসিন্দা আকাশ সামন্ত বলেন, ‘কয়েক মাস আগেও রাধামণি ও নিমতৌড়ি এলাকায় রাত হলেই বাইকের রেষারেষি। পুলিশের তৎপরতায় তা এখন অনেকটাই কমেছে।’
আর এক বাসিন্দা অনুপ কুইলার কথায়, ‘স্কুল ছুটির সময়ে বা বিকেলে বিভিন্ন রাস্তায় বেপরোয়া বাইক চলাচল পুলিশি কড়াকড়ির ফলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, ‘আমরা জেলায় নিরাপদ ও নিয়ম মেনে যান চলাচলের পরিবেশ তৈরি করতে বদ্ধপরিকর। আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতেও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’ জেলার এক ট্র্যাফিক আধিকারিক জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে বাইক দুর্ঘটনা কমেছে। সচেতনতামূলক শিবিরও চলছে।