সুমন ঘোষ, মেদিনীপুর
গবেষণার উন্নতির জন্য ‘কমন ইনস্ট্রুমেন্ট ফেসিলিটি সেন্টার’ গড়ে তোলা হয়েছিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু দেখভালের জন্য টেকনিশিয়ান রাখা হয়নি। কোনও একজন শিক্ষকের উপরে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া থাকে। তা হলে প্রতিটি যন্ত্রের হাল-হকিকত সম্পর্কে খোঁজখবর রাখবেন কে?
তার উপরে মাঝে টানা দু'বছর ধরে চলেছে করোনা-হানা। ওই সময়ে ফেসিলিটি সেন্টারে এসি চালানোর লোকও মেলেনি বলে অভিযোগ। ফলে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই নষ্ট হয়েছে একাধিক দামি ইন্সট্রমেন্ট।
গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে ইউজিসি বা সিএসআরআই অর্থ বরাদ্দ করে। যে অর্থে নতুন যন্ত্রপাতি কেনা যায়। অভিযোগ, সেই সমস্ত যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রাখা হয় না।
এমনকী, যন্ত্র বিকল হলে তা সারানোর জন্যও কোনও অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষকদের কথায়, ‘যন্ত্র তো বিগড়ে যেতেই পারে। সারানোও যায়। কিন্তু তার জন্য তো অর্থ প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই খাতে কোনও অর্থ বরাদ্দ করেন না। ফলে বিকল হলে তা পড়ে পড়ে নষ্ট হয়।’
আর সেই কারণেই বিপাকে পড়তে হয় গবেষকদের। কারণ, গবেষণা তো থামিয়ে রাখা যাবে না। তখন ভরসা খড়গপুর আইআইটি বা বেসরকারি কোনও সংস্থার গবেষণাগার। কিন্তু তা-ও সহজে মেলে না।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেও বারবার স্মারকলিপি দিয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ স্কলার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক শুভদীপ মণ্ডল বলেন, ‘গবেষণাগারের পরিকাঠামো উন্নয়ন, যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত টেকনিশিয়ান নিয়োগ থেকে বিকল যন্ত্র সারানোর দাবি জানিয়েছি বারবার। গবেষণাগারের বেহাল অবস্থার জন্য গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটে।’
এক গবেষকের কথায়, ‘আইআইটির গবেষণাগারে কাজ করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। টাকাও দিতে হয়। অনুমতি পেতে কখনও কখনও তিন মাসও পেরিয়ে যায়। প্রতিটি গবেষণা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হয়। তা হলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ হবে কী করে?’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র গবেষকের কথায়, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো গবেষণার কাজ হয়নি, এমন নয়। পরিকাঠামোগত সুবিধা মিললে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ও সুনাম অর্জন করতে পারত। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে যে, গবেষণা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই।’
অভিযোগ, কোনও গবেষক যদি বড় প্রজেক্ট পান, তার জন্য কোনও সংস্থা থেকে মেশিন কেনার টাকা মেলে, প্রজেক্ট ফেলো নিতে হয়। কিন্তু পারচেজ় কমিটির মিটিং ডাকতে, বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। যে কাজগুলি করার কথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। ফলে, গবেষকরা কাজগুলি নির্দিষ্ট সময়ে করতে পারেন না।
এক গবেষক বলেন, ‘একটি যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রাখা হয় না। এমনকী, যন্ত্র বিকল হলে তা সারানোর জন্যও কোনও অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকল্পের গবেষণার জন্য মিটিং ডাকতেই রাজি হন না কর্তৃপক্ষ। তাঁরা অপেক্ষা করেন, আরও দু’চারজন গবেষক কবে এমন প্রজেক্ট জমা দেবেন। এর ফলে যে গবেষণার সময়সীমা কমে যায়, গবেষকদের সমস্যায় পড়তে হয়, তা বুঝতেই চান না কর্তৃপক্ষ। এই সব কারণেই গবেষণায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়।’